Scottish Fold বিড়ালগুলো তাদের ভাজ করা কানের জন্য অনেক বেশি পরিচিত। তাদের গোলাকার মুখ, বড় গোলাকার চোখ এবং ভাঁজ করা কানের জন্য তাদের আরও বেশি গোলাকার দেখায়। তাদের এই আকৃতির জন্য প্রায়শই তাদের টেডি বিয়ার, পেঁচার সাথে তুলনা করা হয়। তাদের সুন্দর চেহারা এবং মিষ্টি মেজাজের জন্য তারা অনেকের কাছেই অনেক বেশি পছন্দের এবং প্রিয়। তাদের এই ভিন্ন রকমের চেহারা এবং স্নেহশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের জন্য এরা অনেক বেশি পরিচিত। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে Scottish Fold Cat সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
About
Scottish Fold হলো গৃহপালিত বিড়ালের একটি জাত যারা তাদের সহজ-সরল মেজাজ এবং সাধারণ সামাজিকতার জন্য অনেক বেশি পরিচিত। স্কটিশ বিড়ালগুলো বাড়ির অন্যান্য পোষাপ্রাণী এবং পরিবারের মানুষদের সাথে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এছাড়াও এদের বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে। নিন্মে এগুলা দেওয়া হলোঃ
- স্কটিশ বিড়ালগুলোর শরীরে অনেক বেশি ভাঁজ থাকে।
- স্কটিশ বিড়ালগুলোর ওজন ১১ পাউন্ডের মতো হয়ে থাকে।
- একটা স্কটিশ বিড়ালগুলোর দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- স্কটিশ বিড়ালদের কোটের চুলগুলো ছোট হয়।
- স্কটিশ বিড়ালদের কোটগুলো কালো, লাল, ক্রিম, সাদা এবং বাদামী রঙের হয়ে থাকে।
- স্কটিশ বিড়ালগুলোর চোখ সবুজ, নীল এবং সোনালি রঙের হয়ে থাকে।
Health And Treatment
স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলো মোটামুটি একটি স্বাস্থ্যকর বিড়ালের জাত। তবে এদের বংশগত বেশকিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। নিন্মে স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে বর্ণনা করা হলোঃ
Polycystic Kidney Disease
স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলোর পলিসিস্টিক কিডনি রোগে আক্রান্ত প্রবনতা অনেক বেশি থাকে। এটি কিডনির সিস্টের বিকাশ ঘটায় এবং বিড়ালের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সিস্টের আকারও বৃদ্ধি করে যার কারণে বিড়ালের কিডিনির কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
পলিসিস্টিক কিডনির রোগের নিরাময়ের জন্য কোন চিকিৎসা নেই তবে খাদ্য, হাইড্রেশন এবং ঔষধের মাধ্যমে বিড়ালের কিডনির কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
Cardiomyopathy
কার্ডিওমায়োপ্যাথি হলো বিড়ালের একটি জেনেটিক রোগ। কার্ডিওমায়োপ্যাথির কারনে হৃদপিন্ডের পেশিগুলো অস্বাভাবিকভাবে ঘন হয়ে যায় এবং এর ফলে বিড়ালের হৃদপিন্ড কতৃক সমস্ত শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাধা প্রাপ্ত হয়।
কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগটি একটি অপ্রতিরোধযোগ্য রোগ। তবে বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে যেটার মাধ্যমে এই রোগটিতে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
Osteochondrodysplasic
অস্টিওকন্ড্রোডিসপ্লাসিয়া হলো স্কটিশ বিড়ালের একটি জিনগত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের কানগুলো সামনের দিকে বেকে যায় এবং বিড়ালের শরীরের হাড় ও অস্থিগুলো অনেক ব্যাথা হয়।
এই রোগ টি সম্পূর্ণরুপে প্রতিরোধ করা যায় না। তবে, ঔষধ গ্রহণ করার মাধ্যমে এই রোগটি নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।
Ear mites
স্কটিশ বিড়ালদের সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলো কানের মাইটস। কানের মাইট বিড়ালদের জন্য অত্যন্ত বিড়ক্তকর, আর তাই বিড়ালেরা মাইট হওয়া স্থানগুলোকে আচড়াতে চেষ্টা করে যার ফলে কানের মধ্যে ঘা হয়ে যায়। যদি এই রোগের চিকিৎসা সঠিক সময়ে না করা হয় তাহলে বিড়াল বধির হয়ে যেতে পারে এমনকি পরবর্তীতে বিড়ালকে সুস্থ করার জন্য আস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন পরতে পারে।
Feline Lower Urinary Tract
ফেনাইন লোয়ার ইউরিনারি ট্যাক্ট হলো বিড়ালের নিচের মুত্রনালীর একটি রোগ। এটির কারণে বিড়ালের আরও অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান না করা হয় তাহলে এটি মুত্রাশয়ে পাথর, ফেলাইন ইডিওপ্যাথিক সিস্টাইটিস এবং ক্যান্সারের মতো সৃষ্টি করে থাকে। এটির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো অস্বাভাবিক প্রস্রাব। তাই বিড়াল এই রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
Care
বিড়ালের সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিড়ালের প্রতিনিয়তই যত্ন নেওয়া অনেক বেশি জরুরি। নিন্মে স্কটিশ বিড়ালের যত্ন সম্পর্কে বর্ণণা করা হলোঃ
- স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলোর শরীরের ভাঁজগুলোতে ঘন পশম থাকে। তাই বিড়ালের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সপ্তাহে বিড়ালের পশমগুলিতে ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের দাঁতের রোগ অনেক বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। তাই দাঁতের রোগ রক্ষা পেতে বিড়ালকে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের পায়ের নখগুলি জীবানুমুক্ত রাখার জন্য প্রতি সপ্তাহে সেগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে।
- স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলোর কানের মধ্যকার ময়লা থাকলে সেগুলো প্রতিনিয়তই পরিষ্কার করতে হবে।
- স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলো খেলাধুলা করতে এবং মানুষের কাছাকাছি থাকতে অনেক বেশি পছন্দ তাই বিড়ালে খেলনা কিনে দিতে হবে এবং বিড়ালের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচারণ করতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিড়ালকে বেশি বেশি পান করাতে হবে। বিড়ালের সুস্থ থাকার জন্য প্রতিনিয়তই উপোরোক্ত যত্নগুলো করতে হবে।
Food And Nutrition
বিড়ালের সঠিক বৃদ্ধি এবং সুস্থ থাকার জন্য বিড়ালকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হবে। স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলো অন্যান্য বিড়ালগুলোর থেকে দেখতে আলাদা হলেও এদের খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা একই রকমের হয়ে থাকে। নিন্মে স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলোর খাদ্য এবং পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
বাজারে স্কটিশ বিড়ালের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য অসংখ্য খাবার রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কয়েকটি ভালো মানের বিড়ালের খাবার হলোঃ
Simply Nourish
স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালদের জন্য একটি সুস্বাদু খাবার হলো সিম্পলি নউরিশের গ্রেভি টিনজাতকরা চিকেন রেসিপি। এটি মুরগি থেকে আসা আসল প্রাণী প্রোটিন দিয়ে তৈরি। যা বিড়ালের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের করে থাকে।
Feline Natural
ফেনাইন ন্যাচারাল বিড়ালের জন্য একটি পুষ্টিকর ফি টিন জাতীয় খাবার। এটি অত্যন্ত হজমযোগ্য প্রাণী প্রোটিন দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি বিড়ালের শরীরের জয়েন্টগুলো মজবুত করার পাশাপাশি শরীরে ক্লুকোসামিন এবং কনড্রয়েটিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
Dr. ELey’s Cleanprotein
ডঃ এলিসির ক্লিনপ্রোটিন হলো গ্রেইন মুক্ত একধরণের শুকনো খাবার। এটি সম্পূর্ণ ভাবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাণীর মাংস থেকে প্রস্তুত করা হয়। এই খাবারটি অত্যন্ত হজমযোগ্য এবং এটিতে খুবই অল্প পরিমানে কার্বোহাইড্রেট থাকে।
Stella and Chewy’s Absolutely Rabbit
স্টেলা এবং চিউয়ের খাবারটি শুধুমাত্র খরগোশের মাংস থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি প্রোটিনে সমৃদ্ধ একটি খাবার।এই খাবারটি বিড়ালের হজমক্রিয়া বৃদ্ধি এবং প্রোটিনের চাহিদা পূরনের করে থাকে।
History
১৯৬১ সালে সর্বপ্রথম স্কটল্যাডের পার্থশায়ারে কুপার অ্যাঙ্গাসের কাছের একটি খামারে সুসি নামের একটি স্কটিশ ফোল্ড পাওয়া যায়। সুসির কানের মাঝখানে একটি অস্বাভাবিক ভাঁজ ছিলো যার কারণে বিড়ালটিকে দেখতে অনকটাই পেঁচার মতো লাগতো। সুসির বিড়ালছানা হলে সেগুলো প্রতিবেশি কৃষক এবং বিড়াল শৌখিন উইলিয়াম রস সেগুলাকে অধিগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ইউনাইটেড কিংডমের গভর্নিং কাউন্সিল অফ দ্য ক্যাট ফ্যান্সি (GCCF) স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালের জাতটিকে নিবন্ধন করেন এবং সেই সময়ের জেনেটিসিস্ট প্যাট টার্নারের সহায়তায় স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালদের প্রজনন প্রক্রিয়া শুরু করেন।
প্রজনন কর্মসূচির প্রথম তিন বছরে মোট ৭৬ টি বিরালছানার জন্ম হয় যাদের মধ্যে ৪২ টি বিড়ালছানার কান ভাঁজ করা থাকে এবং ৩৪ টি বিড়ালছানার কান সোজা থাকে। স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলো সি এফ এ, টি আই সি, সি এ এ দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত।
Appendix
স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলোর জন্মের পরে চার মাস অব্দি এদের কানগুলো সোজাই থাকে অতঃপর এদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের কানগুলো ভাঁজ হয়ে যায়। স্কটিশ ফোল্ড বিড়ালগুলো পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক, বাচ্চা এবং অন্যান্য প্রাণীদের সাথে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। তবে স্কটিশ বিড়ালদের অস্থিগুলো দুর্বল হয় এবং এদের হাড়ের রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে স্কটিশ ফোল্ড বিড়াল সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটা কমেন্টের মধ্যমে জানাতে পারেন।