এশিয়ার প্রথম স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত বিড়ালের জাতগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম বিড়ালের জাত হলো Siamese Cat। সিয়ামিজ বিড়ালের প্রাজতিটি থাইল্যান্ডের হলেও এটি বর্তমানে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিড়ালের জাত মধ্যেকার একটি হিসেবে বিবেচিত। অনন্য চেহারা এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রকৃতির হওয়ায় অনেকেই সিয়ামিজ বিড়ালগুলোকে অনেক বেশি পছন্দ করেন। সিয়ামিজ বিড়ালকে বলা হয় “মানুষের বিড়াল” কারণ, এরা মালিকদের সাথে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে তাদের সাথে ঘুমাতে এবং কোলে উঠতে অনেক বেশি পছন্দ করে।
যদি কারো অনুগত এবং বন্ধুপূর্ণ বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে সিয়ামিজ বিড়াল হবে তার জন্য আদর্শ বিড়াল। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে সিয়ামিস বিড়াল এবং সিয়ামিজ বিড়ালের পরিচিতি, ইতিহাস, যত্ন এবং চিকিৎসা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
About
সিয়ামিজ বিড়ালগুলো মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।এদের পূর্ণ আকারে পৌঁছাতে প্রায় এক বছরের মতো সময় নেয়। সিয়ামিজ বিড়ালগুলো তাদের মসৃণ এবং স্বতন্ত্র চেহারার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এছাড়াও সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর আরও বেশকিছু পরিচিতি রয়েছে।
- সিয়ামিজ বিড়ালগুলো অনেক বেশি সামাজিক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্নেহময় ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে।
- সিয়ামিজ পুরুষ বিড়ালের ওজন ১০ থেকে১৫ পাউন্ডের হয়ে থাকে এবং মহিলা সিয়ামিজ বিড়ালের ওজন ৮ থেকে ১২ পাউন্ডের হয়ে থাকে।
- সিয়ামিজ বিড়ালের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ২৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে।
- সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর পেশিবহুল শরীর এবং এদের মাথা কীলক আকৃতির হয়ে থাকে।
- সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর একটি ছোট এবং নরম কোট থাকে।
- সিয়ামিজ বিড়ালের চোখগুলো তির্যক, গভীর নীল এবং বাদামী রঙের হয়ে থাকে।
সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর কোটগুলী কমলা, বাদামি, ক্রিম এবং নীল রঙের হয়ে থাকে। সিয়ামিজ বিড়ালের সর্বোচ্চ ২০ বছর অব্দি বেচে থাকে।
Health and Treatment
সিয়ামিজ বিড়ালগুলো একটি প্রাচিন বিড়ালের জাত তাই এটির অন্যান্য হাইব্রিড বিড়ালের থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা কম হয়ে থাকে। নিন্মে সিয়ামিজ বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে বর্ণনা করা হলোঃ
Feline Hyperesthesia Syndrome
Feline Hyperesthesia Syndrome কে সংক্ষেপে FHS ও বলা হয়। এটি বিড়ালের শরীরের পেশিগুলোর অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন করে এবং বিড়ালের আচারণকে পরিবর্তন করে দেয়। ফেলাইন হাইপারেস্থেসিয়া সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বিড়ালের পিঠের নীচের ত্বক স্পর্শ করলেই বিড়াল কুচকে যায়।
FHS – এ আক্রান্ত বিড়ালকে স্পর্শ করলেই অনেক সময় তারা আক্রমনাত্বক আচারণ করে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই বিড়ালকে একাকী থাকতে দিতে হবে এবং পশু চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। নিয়ম মেনে বিড়লকে এই রোগের ঔষধ সেবন করালে এই রোগ থেকে বিড়ালকে সুস্থ করে তোলা যায়।
Urinary Tract Infection
অন্যান্য বিড়ালের জাতগুলোর থেকে সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর মুত্রনালীর সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। মুত্রনালীর সংক্রমণের কারণে সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর মূত্রাশয়ে পাথর, সিস্টাইটিস এবং ফেনাইল লোয়ার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ডিজিজের মতো রোগ হয়ে থাকে।
মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে বিড়ালদের প্রস্রাব করতে অসুবিধা হয়, প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। তাই মূত্রনালির সংক্রমণ হলে অবশ্যই বিড়ালকে পশু চিকিৎসের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
Lymphoma
সিয়ামিজ বিড়লের রোগ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ হারে বৃদ্ধি পাওয়া রোগের নাম Lymphoma। লিম্ফোমা মুলত বিড়ালের লিম্ফোসাইট কোষের ক্যান্সার। এই রোগটি শরীরের যে কোন অঙ্গের কোষে আঘাত করতে পারে। লিম্ফোমাতে আক্রান্ত বিড়ালের ওজন হ্রাস পায়, খাওয়া ইচ্ছে কমে যায় এবং বমি হয়।
লিম্ফোমা আক্রান্ত বিড়ালকে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। লিম্ফোমা আক্রান্ত বিড়ালকে কেমোথেরাপির মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়।
Amyloidosis
অ্যামাইলয়েডোসিস হলো এমন একটি রোগ যেটি, প্রোটিন পূর্ণ মোমের মতো পদার্থ যা বিড়ালের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ লিভার, কিডনি এবং পেটের বিভিন্ন জায়গাগুলোর সাথে আবদ্ধ থাকে। অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্ত বিড়ালগুলোর ওজন হ্রাস পায় বমি হয় এবং দুর্বলতা এবং শক্তির অভাব হয়।
অ্যামাইলয়েডোসিস রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগটি কোন পর্যায়ে আছে এবং কতটা ক্ষতি করেছে তার উপরে। অ্যামাইলয়েডোসিস রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালকে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
Care
বিড়ালকে রোগ মুক্ত রাখতে এবং বিড়ালের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য বিড়ালকে প্রতিনিয়তই যত্ন নিতে হবে। নিন্মে সিয়ামিজ বিড়ালের যত্ন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ
- অন্যান্য ছোট চুলের বিড়ালগুলোর মতো সিয়ামিজ বিড়ালগুলো ও তাদের কোটের যত্ন তারা নিজেরাই নিয়ে থাকে। তবে, মরা চুল থেকে বিড়ালকে পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে একবার হলেও ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের একটি সাধারণ রোগ হলো দাঁতের রোগ। তাই দাঁতের রোগ থেকে বিড়ালকে রক্ষা করতে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের নখগুলো পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতি সপ্তাহে বিড়ালের নখগুলো কেটে দিতে হবে।
- সিয়ামিজ বিড়ালগুলো উতসাহী এবং উদ্যমী জাতের বিড়াল। তাই এদের শারীরিক সুস্থাতার জন্য খেলনা কিনে দিতে হবে।
- বিড়ালকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুকি এড়াতে টিকা প্রদান করতে হবে।
- বিড়ালকে রুটিন অনুযায়ী সুষম খাদ্য দিতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালে শারীরিক সুস্থতা এবং সুষম বৃদ্ধির জন্য বেশি পান করাতে হবে এবং বিড়ালকে পরিমিত পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
Food and Nutrition
সিয়ামিজ বিড়ালগুলো বিড়ালের অন্যান্য জাতের মতোই মাংসাশী, তাই তাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্যের তালিকায় প্রাণীর মাংস বেশি রাখতে হবে। সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর কার্বোহাইড্রেটের বেশি প্রয়োজন নেই তাই খাদ্য তালিকায় ফল এবং সবজি জাতীয় খাবার বেশি রাখার প্রয়োজন নেই। সাধারণত বিড়ালের খাদ্য তালিকায় খাদ্যের সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফল এবং সবজি জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে।
শুকনো এবং ভেজা উভয় ধরণের খাবারই বিড়ালের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে তবে অবশ্যই খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে মাংসকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। একই সাথে বিড়ালকে শস্যজাতীয় খাবার যেগুলা থেকে চর্বির সৃষ্টি হয় এমন খবারগুলো খাদ্য তালিকা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বাজারে বিড়ালের জন্য অনেক রকমের খাবার কিনতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সেরা কয়েকটি খাবার হলোঃ
- রয়্যাল ক্যানিন সিয়ামিজ ড্রাই ক্যাট ফুড
- পুরিনা ক্যাট কম্পিলিট ড্রাই ফুড
- রয়্যাল ক্যানিন ফিলাইন হেল্প নিউট্রেশন
- রাচেল রে নিউট্রিস
সিয়ামিজ বিড়ালের সুস্থাতার জন্য অবশ্যই বিড়ালকে সুষম, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্রময় খাবার খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে খাদ্য তালিকা তৈরি কারনোর সময়ে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।
History
সিয়ামিজ বিড়ালগুলো থাইল্যান্ড থেকে উদ্ভুত একটি বিড়ালের জাত। সিয়ামিজ নামটি এসেছে থাইল্যান্ডের পূর্বনাম “সিয়াম” শব্দটি থেকে। অনেক কিংবদন্তির মতানুসারে, সিয়ামিজ বিড়ালগুলো বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে পাহারা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো এবং এই বিড়ালগুলো পবিত্র বিড়াল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বিড়ালগুলো এতই মূল্যবান ছিলো যে তাদের স্থানীয় নাম উইচিয়েন-ম্যাট যার অর্থ চাদের হীরা ছিলো।
১৮৭৮ সালের ব্যাংককে নিযুক্ত আমেরিকান কনসাল মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে সিয়ামিজ উপহার দেওয়ার মাধ্যমে সিয়ামিজ বিড়ালগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পরে। এর ঠিক দুই বছর পরে ব্যাংককে নিযুক্ত ইংরেজ কনসাল- জেনারেল সিয়ামের রাজার কাছে থেকে দুই জোরা সিয়ামিজ বিড়াল লন্ডনে নিয়ে আসেন।
১৮৯৮ সালে সিয়ামিজ বিড়াল প্রদর্শনীতে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জয়ী হয় এবং এর পরে থেকেই সিয়ামিজ জাতের বিড়ালগুলো দ্রুত গতিতে বিকাশিত হওয়া শুরু করে। ১৯০৬ সালে সি এফ এ আনুষ্ঠানিকভাবে সিয়ামিজ বিড়ালকে একটি স্বাধীন জাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
Appendix
সিয়ামিজ বিড়ালগুলো বিশ্বের গৃহপালিত বিড়ালের প্রাচীন জাতগুলোর মধ্যে একটি। সিয়ামিজ বিড়ালগুলো বিভিন্ন ফিল্ম এবং ওয়েবফিল্মে অভিনয় করেছে। শত শত বছর আগে সিয়ামিজ বিরালগুলি তদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং সুন্দর চেহারার জন্য থাইল্যান্ডের রাজপরিবারদের কাছে অনেক মূল্যবান বিড়াল ছিলো। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে সিয়ামিজ বিড়াল সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।