স্নোশু বিড়ালের জাতটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভূত সিয়ামিজ বিড়াল এবং শর্টহেয়ার জাতের বিড়ালের একটি নতুন সংকর বিড়ালের জাত। স্নোশু বিড়ালের চারটি স্বতন্ত্র সাদা পায়ের ছাপের কারণে স্নোশু নামটি এসেছে। সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর মতো স্নোশু বিরালগুলোরও একই রকমের ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে,স্নোশু বিড়ালগুলো ও অনেক বেশি স্নেহশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে।
তাই বাসাবাড়ির গৃহে পালন করার জন্য স্নোশু বিড়ালগুলো পছন্দের তালিকার উপরের দিকে অবস্থান করে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে স্নোশু বিড়ালের খাদ্য চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা করা হবে।
About
স্নেহশীল, বন্ধুত্বপূর্ণ,আত্মবিশ্বাসী এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্বের জন্য স্নোশু বিড়ালগুলো অনেক বেশি পরিচিত। স্নোশু বিড়ালগুলো পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীদের সাথে খুব সহজেই ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। এছাড়াও স্নোশু বিড়ালগুলোর আরও বেশ কিছু পরিচিতি থাকে।
- স্নোশু বিড়ালগুলোর ওজন ১২ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- স্নোশু বিড়ালদের দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি অব্দি হয়ে থাকে। স্নোশু বিড়ালগুলোর কোট ছোট সাইজের হয়ে থাকে।
- স্নোশু বিড়ালদের কোট গাঢ় নীল, সাদা রঙের হয়ে থাকে।
- সোশু বিড়ালদের কোটগুলো কারপয়েন্ট প্যাটার্নের হয়ে থাকে।
- স্নোশু বিড়ালগুলোর আয়ুকাল ১৫ বছর
Health and Treatment
স্নোশু বিড়ালগুলো পরিবারের জন্য একটি দুর্দান্ত বিড়াল। স্নোশু বিড়ালগুলো একটি স্বাস্থ্যকর বিড়ালের জাত। তবে বিড়ালগুলোর সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। নিন্মে স্নোশু বিড়ালগুলোর স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে বর্ণ্না করা হলোঃ
Atopy
অ্যাটপি সাধারণত এক থেকে তিন বছরের বিড়ালদের হয়ে থাকে। অ্যাটোপি আক্রান্ত হলে বিড়ালেরা স্বাভাবিকের থেকে বেশি ঘামে, শরীরের একোটি নির্দিষ্ট জায়গায় অতিরিক্ত চাটে এবং শরীরের বিভিন্ন এলার্জি দেখা দেয়। অ্যাটোপির লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিড়ালকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে এবং বিড়ালের শরীরের সত্যিই অ্যাটোপি আছে কি না সেটা পরীক্ষা করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
Feline Aortic Thromboembolism
ফেলাইন অর্টিক থ্রম্বোইম্বোলিজম হলো বিড়ালের হার্টের সমস্যা জনিত একটি রোগ। ফেলাইন অর্টিক থ্রম্বোইম্বোলিজম হলে বিড়ালের পেছনের পায়ে ব্যাথা হয়, বিড়াল কান্না করে এবং হাইপারভেন্টিলেটিং হয়। বিড়ালের এই লক্ষ্যণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে। আর যদি বিড়াল ইতিমধ্যে অন্য কোন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে ফ্যাট জাতীয় খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
Feline Viral Rhinotracheitis
ফেলাইন ভাইরাল রাইনোট্রাকাইটিস হলো হার্পিস ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রামণ রোগ। এটি বিড়ালছানাদের মধ্যে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফেলাইন ভাইরাল রাইনোট্রাকাইটিস শুধু মাত্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্যই দায়ী নয় এটি বিড়ালের চোখেও সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের আক্রান্ত হলে বিড়ালের নাক বন্ধ হয়ে যায়, অনিয়ন্ত্রিত হাঁচি বেড়ে যায়, চোখ লালচে হয়ে যায় এবং বিড়ালের শরীরে জ্বর হয়। তাই বিড়ালের এই সকল লক্ষণ দেখা মাত্রই বিড়ালকে ডাক্তারের নিকট যেতে হবে। এই রোগের নিরাময় নেই তবে অ্যান্টিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, অন্যান্য ঔষুধ এবং বিশেষ খাদ্যের মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
Hyperthyroidism
থাইরয়েড যখন অনেক বড় আকার ধারণ করে তখন সেটিকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী বিড়ালদের এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। হাইপারথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত বিড়াল ক্ষুধা ও তৃষ্ণা বেড়ে যায়, ওজন কমে যায়, কোট অবিকৃত হয়ে যায় এবগ বিড়ালের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায়। তাই এই সকল লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে। নয়তো বিড়ালের দুর্বলতার পাশাপাশি কিডনি এবং হার্টি ফেইল করার সম্ভাবনা থাকে।
Hypertrophic Cardiomyopathy
হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি হলো বিড়ালের একটি হৃদরোগ যেটি ফেনালাইনে বেশি দেখা যায়। হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি হৃদপিন্ডের দেওয়ালগুলোকে আরও ঘন করে তোলে যার ফলে রক্ত জমাট বাধতে শুরু করে এবং বিড়ালের হার্ট ফেইল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিড়াল হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি পায়, কাশি হয় এবং অলসতা বেড়ে যায়। এই সকল লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। এটি একটি বংশগত রোগ তাই এটার কোন প্রতিকার নেই তবে চিকিৎসকের পরাশর্ম অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
Care
বিড়ালের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং বিড়ালকে রোগ মুক্ত রাখতে অবশ্যই নিয়মিত বিড়ালের যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত যত্ন নিলে বিড়ালের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যে ও ভালো থাকে। নিন্মে বিড়ালের যত্নের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- স্নোশু বিড়ালগুলো ছোট চুলের বিড়ালের জাত। তাই এরা এমনিতেই পরিষ্কার থাকে। তবে বিড়ালের মরা চুল দূর করার জন্য প্রতি সপ্তাহে একবার অন্তত ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের দাঁতের রোগ থেকে বাচতে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের শারীরিক গঠন এবং বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে খেলতে দিতে হবে।
- বিড়ালের নখগুলো পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে একবার নখ গুলো কাটতে হবে।
- বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির জন্য রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।
Food and Nutrition
বিড়ালের সুস্থতা এবং শারীরিক গঠন বজায় রাখতে অবশ্যই সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য শরীরের সুষম বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে থাকে। নিন্মে স্নোশু বিড়ালের খাদ্য নিয়ে বর্ণণা করা হলোঃ
অন্যান্য বিড়ালদের মতো স্নোশু বিড়ালেরাও উচ্চ মানের মাংস অনেক বেশি পছন্দ করে। আর বিড়ালের শারীরিক সুস্থাতার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হলো প্রোটিন। তাই বিড়ালকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বেশি দিতে হবে। এছাড়াও বিড়ালকে পর্যাপ্ত পরিমানে অ্যামিনো অ্যাসিড টরিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।
বিড়ালকে অবশ্যই পরিমিত খাবার খাওয়াতে হবে। এবং বিড়ালকে রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে হবে। বিড়ালকে বেশি পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
History
১৯৬০ এর দশকে পেনসিল্ভানিয়াতে সিয়ামিজ বিড়াল প্রজননকারী ডরোথি হিন্ডস একটি নতুন জাতের সিয়ামিজ বিড়ালছানা তৈরি করেছিল। যেগুলার সাদা সাদা বিন্দু এবং পায়ের সমন্বয়ে অনন্য চিহ্ন ছিলো। ডরোথি হিন্ডস বিড়ালছানার চেহেরা দেখে প্রজনন শুরু করেন। হিন্ডস ডরোথি বিড়ালগুলোর সাদা পায়ের কারণে জাতটির নাম দেন স্নোশু। এবং বিড়ালের এই জাতটিকে স্থানীয় বিড়ালশো তে প্রচার করা শুরু করেন।
১৯৮২ সালে ক্যাট ফ্যান্সিয়ারস ফেডারেশন (সিএফএফ) এবং ১৯৯৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্যাট অ্যাসোসিয়েশন বিড়ালটিকে মর্যাদা প্রদান করেন। স্নোশু বিড়ালগুলো ফিফ, টাআইসিএ, জি সি সি এফ দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত। ২০১২ সালে স্নোশু ক্রস সোশ্যাল মিডিয়া তারকা হিসেবে সেলিব্রেটি মর্যদা অর্জন করেছে।
Appendix
স্নোশু বিড়ালগুলো অপরিচিতদের থেকে একটু দূরে থাকতে পছন্দ করে এবং পরিচিতদের সাথে অনেক বেশি দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখে। স্নোশু বিড়ালগুলো মানব পরিবারের সকল বয়সী মানুষদের সাথে থাকতে এবং মিশতে অনেক বেশি পছন্দ করে। স্নোশু বিড়ালগুলো বাড়ির অন্যন্য পোষা প্রাণী কুকুদের সাথেও খুব সহজেই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। স্নোশু বিড়ালগুলো বেশিক্ষণ একা থাকতে অপছন্দ করে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে স্নোশু বিড়ালের ইতিহাস, খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে তা জানাতে পারেন।