টনকিনিজ হলো গার্হস্থ্য জাতের বিড়াল। এটি সিয়ামিজ এবং বার্মিজ বিড়ালদের মধ্যে ক্রসব্রিডিং মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়েছিল। টনকিনিজ বিড়ালগুলোর সুক্ষ্ম কোটের প্যাটার্ন এই বিড়ালগুলো অন্যান্য সকল বিড়ালদের থেকে আলদা করেছে। আধা-লম্বা চুলের টনকিনিজ বিড়ালগুলো ইউরোপের দেশগুলো জার্মানি, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডে অনেক বেশি জনপ্রিয়। টনকিনিজ বিড়ালদের রঙিন ব্যক্তিত্ব হলো তাদের অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য।
যদি কারো সিয়ামিজ এবং বার্জিম উভয় বিড়ালদের প্রতিই দুর্বলতা থাকে কিন্তু এদের মধ্যে শুধু একটি বিড়ালকেই গৃহে পালন করতে চায় তাহলে টনকিনিজ হবে তার জন্য সবচেয়ে আদর্শ চয়েজ। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে টনকিনিজ বিড়ালের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ইতিহাস এবং ইত্যাদি সকল খুটি নাটি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
About
টনকিনিজ বিড়াল হলো সিয়ামিজ এবং বার্মিজ বিড়ালের একটি মিশ্রণ বিড়ালের জাত। টনকিনিজ বিড়ালগুলো অনেক স্মার্ট, মিষ্টি এবং মিলনশীল বিড়ালের জাত। ছোট কৈশিক টনকিনিজ বিড়ালগুলো সারা বিশ্বে অনেক বেশি পরিচত। এছাড়াও টনকিনিজ বিড়ালের বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে।
- টনকিনিজ বিড়ালেরা অনেকের কাছেই টঙ্ক নামে পরিচিত।
- টনকিনিজ বিড়ালেরা সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের ওজন ১২ পাউন্ড অব্দি হয়ে থাকে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের দৈর্ঘ্য ২৮ ইঞ্চি অব্দি হয়ে থাকে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের কোটের চুলগুলো ছোট এবং মাঝারি সাইজের হয়ে থাকে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের কোট প্লাটিনাম, নীল এবং প্রাকৃতিক রঙের হয়ে থাকে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের চোখগুলো নীল ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে।
Health and Treatment
টনকিনিজ বিড়ালগুলো একটি দীর্ঘজীবি বিড়ালের জাত। এরা ১৫-২০ বছর অব্দি বেছে থাকে। টনকিনিজ বিড়ালগুলো সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। নিন্মে টনকিনিজ বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলোঃ
Hyperthyroidism
টনকিনিজ বিড়ালদের সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলোর একটি হলো হাইপারথাইরয়েডিজম। এটি অত্যাধিক সক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থির কারণে হয়ে থাকে। হাইপারথাইরয়েডিজম এ আক্রান্ত হলে বিড়ালের ক্ষুধা এবং ওজন হ্রাস পায়, ঘন ঘন প্রসাব হয়, বমি, ডাইরিয়া এবং অস্থিরতা বেড়ে যায়। এই লক্ষ্যণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই বিড়ালকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে। যদি এটার চিকিৎসা না করা হয় তাহলে হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে হৃদরোগ এবং কিডনি ফেইল করার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। ঔষুধ এবং অস্ত্রোপাচার এর মাধ্যমে বিড়ালকে এই রোগ থেকে সুস্থ করে তোলা যায়।
Subvalvular Aortic Stenosis
সাবভালভুলার অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস টনকিনিজ বিড়ালগুলোর একটি হৃদরোগের নামে। বিড়াল এই রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে। যদি রোগটি প্রাথমিক স্তরে থাকে তাহলে ঔষুধ দিয়েই এই রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় তবে গুরুতর অবস্থায় গেলে অস্ত্রোপাচার করতে হবে।
Hyperesthesia Syndrome
হাইপারেস্থসিয়া ডিন্ড্রোম এমন একটি অবস্থা যেটি টনকিনিজ বিড়ালদের ত্বকের অস্বাভাবিক সংকোচন এবং সংবেদন ঘটায়। এই রোগের কারণে বিড়ালদের চুল পড়া এবং ত্বকের ঘা হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ঔষধ এবং পরিষ্কার পরিবেশ প্রদানের মাধ্যমে বিড়ালকে এই রোগ থেকে সুস্থ করে তোলা যায়।
Retinal Atrophy
কিছু কিছু টনকিনিজ বিড়াল রেটিনাল অ্যাট্রোফি রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়াল রেটিনার অবক্ষয়ের কারণে অন্ধ হয়ে যায়। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই। তাই এই রোগ থেকে বিড়ালকে রক্ষা করতে নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করতে হবে এবং বিড়ালের সঠিক যত্ন নিতে হবে।
Amyloidosis
অয়ামাইলয়েডোসিস রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের শরীরে অ্যামাইলয়েড নামক প্রোটিন অস্বাভাবিকভাবে জমা হয়। আর এর ফলে বিড়ালের অঙ্গ বিকল হয়ে হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু অব্দি হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের ওজন কমতে শুরু করে এবং অলস হয়ে যায়। অ্যামাইলয়েডোসিস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বিড়ালকে অবশ্যই ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে । এই রোগের কোন নিরাময় থাকলেও ঔষধ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
Care
বিড়ালের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই বিড়ালের যত্ন নিতে হবে। নিন্মে টনকিনিজ বিড়ালের যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- টনকিনিজ বিড়ালগুলোর কোট ছোট হওয়ার কারণে এই বিড়ালগুলো এমনিতেই অনেক বেশি পরিষ্কার থাকে। তারপরেও প্রতি সপ্তাহে একবার কোট ব্রাশ করাতে হবে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের জলাতঙ্ক, লিউকেমিয়া এবং প্যানলিউকোপেনিয়ার মতো সাধারণ রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য টিকা দিতে হবে।
- টনকিনিজ বিড়ালদের নখগুলো সপ্তাহে কাটতে হবে।
- বিড়ালের স্বাস্থ্য সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো দাঁতের সমস্যা। তাই বিড়ালকে দাঁতের রোগ থেকে মুক্তি দিতে প্রতিদিন ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের ডায়াবেটিস, আর্থাইটিস এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা করতে বিড়ালের ওজন পরিমাপ করতে হবে।
- বিড়ালের প্রস্রাব পায়খানা করার লিটার বক্স পরিষ্কার রাখতে হবে
- টনকিনিজ বিড়ালগুলো খেলাধুলা করতে অনেক ভালোবাসে। তাই বিড়ালকে সুস্থ রাখার জন্য খেলনা কিনে দিতে হবে।
Food and Nutrition
অন্যান্য সব বিড়ালদের মতো টনকিনিজ বিড়ালগুলোর ও প্রধান খাবার হিসেবে পশুর মাংস অনেক বেশি প্রয়োজন। বিড়ালের বয়স,বিড়ালের আকার এবং ওজনের উপর নির্ভর করে বিড়ালের খাবারের তালিকা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। টনকিনিজ বিড়ালগুলো অনেক বেশি শুকনা খাবার খেতে পছন্দ। বাজারে টনকিনিজ বিড়ালের অনেক খাবার কিনতে পাওয়া যায়। নিন্মে টনকিনিজ বিড়ালের জন্য সেরা কয়েকটি খাবারের নাম দেওয়া হলোঃ
Purina Pro Plan
বিড়ালকে খাওয়ার জন্য বাজারের অন্যতম সেরা ড্রাই ফুড হলো পুরিনা প্রো প্লান। এটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ তাই বিড়ালের হজমে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুরিনা প্রো প্লান খাবারটি অনেক বেশি কার্যকর। এটিতে ৪০% প্রোটিন ১৮% ফ্যাট এবং ২.৫% ফাইবার থেকে। যা বিড়ালের লিনোলিক অ্যাসিড, জিঙ্ক, টরিন এবং ওমেগা ফ্যটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করে।
Muse by Purina
মিউজ বাই পুরিনা আসল স্যামন দিয়ে তৈরি একটি বিড়ালের সুস্বাদু খাবার। এছাড়াও এই খাবারটিতে ডিম এবং কম-ল্যাকটোজ দই রয়েছে যা বিড়ালের হজমে সহায়তা করে। এটিতে কোন প্রকারে শস্য নেই বিধায় এটি বিড়ালের পেটে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না। এটিতে ৩২% প্রোটিন ১৪% চর্বি ৩% ফাইবার এবং ১২% মশ্চারাইজার থাকে।
James Wellbed Dry Senior Cat Food
বড় বিড়ালদের জন্য অন্যতম সেরা একটি ড্রাই ফুড হলো জেমস ওয়েলবেড। এটি বাদামী চাল, টার্কির চর্বি, মাছের তেল , গাজর এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও এটিতে ক্র্যানবেরি নির্যাস এবং ইউকা নির্যাস দেওয়া হয় যেটা বিড়ালের লিটার বক্সের গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। এটিতে ৩১% প্রোটিন, ১৯.৫% চর্বি, ৭% নির্যাস এবং ১.৫% ফাইবার থাকে। এটি বিড়ালের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
Origin Six Fish Dry Cat Food
যেসকল টনকিনিজ বিড়ালগুলো মাছ অনেক বেশি পছন্দ করে তাদের জন্য উত্তম হলো অরিজেন সিক্স ফিশ ড্রাই ক্যাট ফুড। এটি ম্যাকেরেল, ফ্লাউন্ডার, হেরিং, সিলভার হেক, মঙ্কফিশ এবং রেডফিশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটিতে ৪০% প্রোটিন, ২০% চর্বি এবং ৫% ফাইবার থাকে। এটি একটি উচ্চ মানের বিড়ালের খাবার। তাই বিড়ালকে অবশ্যই এটি খাওয়ানো যায়।
History
টনকিনিজ-সদৃশ বিড়ালগুলো ১৯ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চমের দেশগুলোতে বিদ্যমান ছিলো। আধুনিক টনকিনিজ বিড়ালগুলো ব্রিডারের সাথে ক্রসব্রিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে। কানাডার মার্গারেট কনরয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেন বার্লেটা বিড়ালের জাতগুলির মতো স্বতন্ত্র চেহারা এবং ব্যক্তিত্বের আদর্শ তৈরি করার লক্ষ্যে সিয়ামিজ এবং বার্মিজ জাতগুলোর মাধ্যমে টনকিনিজ বিড়াল উৎপাদন করা হয়েছিল। ২০০১ সালে ক্রসব্রীড থেকে প্রতিষ্ঠিত বিড়ালের প্রাজাতিকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং ইন্দোচীনের টককিন অঞ্চলের নামটি বিড়ালের নামের রেফারেন্স হিসেবে যুক্ত করা হয়। টনকিনিজ বিড়ালগুলো সিএফএ, টিয়াইসিএ, এসিএফ দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত।
Appendix
টনকিনিজ বিড়ালগুলো অত্যন্ত সামাজিক একটি বিড়ালের জাত। অন্যান্য বিড়াল মানুষের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলেও টনকিনিজ বিড়ালগুলো মানুষের মনোযোগ অনেক বেশি পছন্দ করে। যদি কেউ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্নেহপূর্ণ বিড়ালকে পছন্দ করে থাকে তাহলে টনকিনিজ হবে তার জন্য আদর্শ বিড়াল। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে টনকিনিজ বিড়ালের সকল খুটিনাটি বিষয় জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।