গৃহপালিত বিড়ালের জাতের মধ্যে একটি জনপ্রিয় বিড়াল হলো টয়গার বিড়াল। টয়গার বিড়ালগুলো মাঝারি আকারে এবং বাঘের দাগযুক্ত হয়ে থাকে। ১৯৮০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টয়গার বিড়ালটি বিকাশিত হয়েছিল। টয়গার বিড়ালগুলো বিড়ালের সবচেয়ে সুন্দর জাতগুলো মধ্যে একটি। গৃহপালিত বিড়াল হলেও এটি দেখতে বন্য বাঘের মতো।
টয়গার বিড়ালের আবিষ্কারক জুডি সুগডেন বলেছেন যে, বন্য অঞ্চলে বাঘ সংরক্ষণের বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য টয়গার বিড়ালকে তৈরি করা হয়েছিল। যারা গৃহে পালনের জন্য সুদর্শন বিড়াল খুজে থাকেন তাদের জন্য টয়গার বিড়ালটি হবে আদর্শ বিড়াল। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে টয়গার বিড়ালের স্বাস্থ্য খাদ্য চিকিৎসা ইতিহাস এবং ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
About
টয়গার বিড়ালগুলো একটি আদর্শ মেজাজ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্বের হয়ে থাকে। টয়গার বিড়ালগুলো খুব সহজেই পরিবারের শিশু বা পোষা প্রাণীদের সাথে মিশতে পারে এবং তাদের সাথে খেলধুলা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। নিন্মে টয়গার বিড়ালের আরও কিছু পরিচিতি দেওয়া হলোঃ
- টয়গার বিড়ালদের অন্য নাম হলো খেলনা বাঘ
- টয়গার বিড়ালের ওজন ৭ থেকে ১৫ পাউন্ডের হয়ে থাকে।
- টয়গার বিড়ালদের দৈর্ঘ্য ১৮ ইঞ্চি অব্দি হয়ে থাকে।
- টয়গার বিড়ালদের কোটের চুলগুলো ছোট সাইজের হয়ে থাকে।
- টয়গার বিড়ালদের কোটগুলো কমলা, কালো এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে।
- টয়গার বিড়ালের কোট গুলো ট্যাবি প্যাটার্নস এর হয়ে থাকে।
- টয়গার বিড়ালের চোখগুলো সাধারণত গাঢ় বাদামী রঙের হয়ে থাকে।
Health and Treatment
টয়গার বিড়ালদের নূন্যতম প্রজনন এবং হাইব্রিড শক্তির কারণে সাধারণত এই বিড়ালগুলো স্বাস্থ্যকর বিড়াল হয়ে থাকে। তবে এই বিড়ালগুলোরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। এই বিড়ালগুলো যেহেতু একটি ট্যাবি গৃহপালিত শর্টহেয়ার বিড়ালের সাথে একটি বেঙ্গল বিড়ালের প্রজনন করানোর মাধ্যমে হয়েছিল তাই এই বিড়ালগুলো বেঙ্গল জেনেটিক্সের হয়ে থাকে। আর বেঙ্গল জেনেটিক্সের বিড়ালগুলোর স্বাস্থ্য সমস্যা খুবই কম। নিন্মে এই প্রজাতির বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা ও চিকিৎসা সম্পর্কে দেওয়া হলোঃ
Heart Murmurs
হার্ট মুর্মার হলো হার্টের অস্বাভাবিক শব্দ যা অশান্তভাবে রক্তের প্রবাহের কারণে হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু হার্ট মুর্মার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও হার্টের শব্দ হয় না। টয়গার বিড়ালদের মধ্যে হার্টের মুর্মারস রোগ টি সাধারণ রোগ। তাই এই রোগটি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে। এই রোগটি ঔষধ মাধ্যমে ঠিক করা যায় তবে রোগটি গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
Hypertrophic Cardiomyopathy
হারপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি বিড়ালের হৃদপিণ্ডের পেশিকে ঘন করে তোলে। টয়গার বিড়ালেরা বেঙ্গল জেনেটিক্সের হওয়ার কারণে এটি টয়গার বিড়ালের জন্য কম উদ্বেগের বিষয়। হারপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত হলে বিড়ালের হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেনের হ্রাস পায় এবং এটি হার্ট ফেইলের কারণ হয়ে থাকে।
হারপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত হলে বিড়ালকে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে। এই রোগটির চিকিৎসায় সাধারণত ঔষধ প্রদান করতে হয় তবে কিছু ক্ষেত্রে ঘন হৃদপিণ্ডের পেশি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
Retinal Atrophy
রেটিনাল অ্যাট্রোফি হলো একটি বংশগত রোগ। এটি চোখের অবক্ষয়জনিত অবস্থা যা বিড়ালকে আস্তে আস্তে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের চোখের পিছনের টিস্যুর আলো-সংবেদনশীল স্তর রেটিনার ধীরে ধীরে অবনতি হয়। টয়গার বিড়ালদের জন্য একটি সাধারণ রোগ। তবে যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে বিড়াল সম্পুর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রেটিনাল অ্যাট্রোফি রোগের কোন প্রতিকার নেই এবং যদি একবার রেটিনা ক্ষয় হয়ে যায় তাহলে ক্ষয় কোন ভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। তাই রোগের অগ্রগতি ধীর এবং বিড়ালের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে।
Agalactia
অ্যাগালাক্টিয়া রোগে আক্রান্ত একটি মা বিড়াল দুধ উৎপাদন করতে অক্ষম হয়। সাধারণত এই রোগটি মানসিক চাপ এবং অপুষ্টি সহ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এটি মা বিড়াল এবং বিড়ালছানা উভয়ের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
সাধারণ পরিপূরক খবার এবং হাইড্রেশন ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। তবে দ্রুত সুস্থ করে তোলার জন্য ঔষুধের ও প্রয়োজন হয়ে থাকে।
Care
বিড়ালকে সুস্থ এবং রোগ মুক্ত রাখার জন্য অবশ্যই প্রতিদিন বিড়ালের যত্ন নেওয়া উচিত। টয়গার বিড়ালের যত্ন নেওয়ার জন্য সাধারণত যে রুটিন অনুসরণ করা হয় সেটা অন্যান্য সকল বিড়ালদের জন্য একটি আদর্শ রুটিন। নিন্মে টয়গার বিড়ালের যত্নের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো।
- টয়গার বিড়ালদের চুলগুলো অনেক ছোট হয়ে থাকে। তাই এরা এমনিতেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখায়। তবুও বিড়ালকে মরা চুল থেকে নিস্তার দিতে সপ্তাহে একদিন ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালকে দাঁতের রোগ থেকে রক্ষা করতে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করাতে হবে
- বিড়ালের কান পরিষ্কার করতে হবে
- বিড়ালের নখগুলো সপ্তাহে ছোট করতে হবে।
- টয়গার বিড়ালগুলোর খেলধুলার জন্য প্রয়োজনীয় খেলনা কিনে দিতে।
- বিড়ালের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।
Food and Nutrition
শারীরিক বৃদ্ধি এবং সুস্থতার জন্য অবশ্যই বিড়ালকে সুষম খাবার দিতে হবে। নিন্মে টয়গার বিড়ালের খাদ্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
গৃহপালিত অন্যান্য ছোট চুলের বিড়ালগুলো যে খাবার খেয়ে থাকে তার সবগুলোই টয়গার বিড়াল খেয়ে থাকে। সকল বিড়ালগুলোর মতো টয়গার বিড়ালেরাও মাংসাশী। তাই এদের খাবারের তালিকায় অবশ্যই মাংস জাতীয় খাবারের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে। বিড়ালকে অবশ্যই শুষ্ক খাবার বেশি খেতে দিতে হবে। এছাড়া যে সকল খাবারে প্রাণি প্রোটিন অনেক বেশি থাকে সেই সকল খাবার বেশি খেতে দিতে হবে। বাজারে বিড়ালের জন্য অনেক ড্রাইফুড পাওয়া যায়। নিন্মে কয়েকটি সেরা ড্রাই ফুডের নাম দেওয়া হলোঃ
- Grain Free Dry Cat Food with Chicken
- Grain Free Cat Food with Salmon
- Dry Cat Food with Insect Portion
এছাড়া বিড়ালের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য চর্বি জাতীয় খবার খাওয়া হবে এবং যদি বিড়াল মাছ খেতে পছন্দ করে তাহলে মাছ খেতে দিতে হবে। বিড়ালকে বেশি পানি পান করাতে হবে।
History
১৯৮০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম এই জাতটির বিকাশ শুরু হয়েছিল। জুডি সুগডেন নামক একজন প্রজননকারী তার ম্যাকেরেল ট্যাবিতে বেশ কিছু পার্থক্য খুজে পেয়েছিলেন তার বিড়ালের মধ্যে বেশ কিছু স্বতন্ত্র চিহ্ন লক্ষ্য করেছিলেন। বিড়ালগুলোর মুখের ওপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগগুলো জেনেটিক্যালি প্রমাণ করতো যে, গৃহপালিত বিড়ালের মধ্যে বৃত্তাকার বাঘের মুখের প্যাটার্ন তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।
ভারতের রাস্তা থেকে একটি বিড়াল আমদানী করার পরে সেটার সাথে ট্যাবির প্রজনন শুরু করে এবং একটি খেলনা বাঘ বিড়ালের জাত তৈরি করতে সক্ষম হন। ১৯৯৩ সালে টি আই সি এ টয়গার বিড়ালের নিবন্ধন গ্রহণ করে এবং ২০০০ সালে টয়গার বিড়ালের নতুন প্রজাতিকে প্রদর্শনী ক্লাসে নিয়ে যায়। অবশেষে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টয়গার বিড়ালকে একটি চ্যাম্পিয়নশিপ বিড়াল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০২০ সালে টিআইসিএ টয়গার বিড়ালকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
Appendix
টয়গার বিড়ালগুলো একটি সুন্দর এবং সুসজ্জিত বিড়ালের জাত। টয়গার বিড়ালের কোন প্রকারভেদ নেই। টয়গার বিড়াল অন্যান্য বিড়ালের মতোই শুধু তাদের চেহারা বাঘের মতো। যদি কারো বাঘের মতো কোন গৃহপালিত বিড়ালের প্রতি দুর্বলতা থাকে তাহলে টয়গার বিড়াল হবে তার জন্য আদর্শ পছন্দের। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে টয়গার বিড়াল সম্পর্কে সকল খুটিনাটি বিষয় জানতে পেরছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।