European Shorthair Cats are The Perfect Cat for any Family

গৃহপালিত বিড়ালের জাত গুলোর মধ্যে ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালের জাতটি একটি জনপ্রিয় জাত। এটি একটি বিড়ালের পুরাতন যাদেরকে এফআইএফএ এবং ডাব্লুসিএফ ইউরোপীয় বিড়াল ও বলা হয়ে থাকে। এই বিড়ালগুলো তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতার জন্য অনেক বেশি জনপ্রিয়। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা করা হলো।  

About

ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালকে আসল ঘরের বিড়াল বলা হয়। পূর্বে ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালগুলো সেল্টিক হর্টহেয়ার নামে পরিচিত ছিলো। এছাড়াও এই বিড়ালগুলোর বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে। নিন্মে ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালের পরিচিতি গুলো উল্লেখ করা হলোঃ 

  • ইউরোপীয় শর্টিহেয়ার বিড়ালগুলো  মিশুক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে 
  • ইউরোপীয় শর্টিহেয়ার বিড়ালগুলো মাঝারি থেকে বড় আকারের হয়ে থাকে। 
  • ইউরোপীয় শর্টিহেয়ার মহিলা বিড়ালগুলোর ওজন ৮ থেকে ১২ পাউন্ড এবং পুরুষ ইউরোপীয় শর্টিহেয়ার বিড়ালগুলোর ওজন ১২ থেকে ১৫ পাউন্ডের হয়ে থাকে। 
  • ইউরোপীয় শর্টিহেয়ার বিড়ালগুলোর উচ্চতা ৯ থেকে ১১ ইঞ্চির হয়ে থাকে। 
  • ইউরোপীয় শর্টিহেয়ার বিড়ালগুলো নীল, কালো, ক্রিম, বেইজ, ধুসর, বাদামী রঙের হয়ে থাকে। 

এছাড়াও ইউরোপীয় বিড়ালগুলোর জীবনকাল ১৫ থেকে ২০ বছরের হয়ে থাকে। এরা পরিবারের যেকোন সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। 

Health and Treatment

ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালগুলো সামগ্রিকভাবে একটি স্বাস্থ্যকর বিড়ালের জাত। তবে অন্যান্য বিড়ালদের মতো এই বিড়ালগুলোর ও বেশকিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। নিন্মে ইউরোপীয় বিড়ালদের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হলোঃ 

Feline Lower Urinary Tract Disease (FLUTD)

বিড়ালদের সবচেয়ে সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো ফেলাইন নিন্ম মূত্রনালীর রোগ। বিড়ালের মূত্রাশয়ের গঠনে বা ফাংশনে ত্রুটি থাকলে এই রোগটি হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের প্রস্রাব বেদনাদায়ক হওয়া, ঘন মুত্রত্যাগ, প্রস্রাবে রক্ত, যৌনাঙ্গ ঘন ঘন চাটার মতো লক্ষণ দেখা যায়। বিড়ালদের এই লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত এক্স-কে এবং আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এই রোগের টেস্ট করা হয়। তরল থেরাপী, খাবারের পরিবর্তন এবং ক্যাতেটারাইজেশন এর মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। 

Heartworm

বিড়ালের জন্য অন্যতম একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলো হার্টওয়ার্ম। সাধারণত এই রোগের বাহক হলো মশা। হার্টওয়ার্ম বিড়ালের ইমিউন সিস্টেম, ফুসফুস এবং হার্টকে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের ওজন কমে যাওয়া, বমি ডায়রিয়া হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত অস্ত্রোপাচার অপসারণ, শিরায় তরল থেরাপি, অক্সিজেন থেরাপি, কার্ডিওভাসকুলার ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। 

Polycystic kidney disease

পলিসিস্টিক কিডনি রোগ হলো এক প্রকারের কিডনি রোগ যা কিডনিতে সিস্টের পরিমান ও সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং কিডনির টিস্যুকে আছন্ন করে ফেলে। সাধারণত এটি বিড়ালের একটি বংশগত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের অত্যধিক তৃষ্ণা পাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, বমিতে রক্ত আসার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত আল্টাসাউন্ডের মাধ্যমে এই রোগ শনাক্ত করা হয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, তরল থেরাপি এবং ঔষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।  

Care

বিড়ালের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং বিড়ালকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। নিন্মে ইউরোপীয় বিড়ালগুলোর যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ 

  • ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালগুলোর চুল অনেক ছোট হয়ে থাকে। তাই এদের প্রতিদিন ব্রাশ করাতে হয় না। তবে এদের দেহের মরা চুল অপসারণত করতে সপ্তাহে একদিন ব্রাশ করাতে হবে। 
  • ইউরোপীয় বিড়ালগুলো শিকার করতে পছন্দ করে এবং দৌড়াদৌড়ি খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। তাই বিড়ালকে খেলনা কিনে দিতে হবে। 
  • বিড়ালের দাঁত এবং মাড়ির রোগ এড়াতে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করাতে হবে। 
  • বিড়ালের কানের রোগ থেকে মুক্তি দিতে বিড়ালের কান পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং কান পরিষ্কার করতে হবে। 
  • বিড়ালকে রুটিন অনুযায়ী সুষম খাবার দিতে হবে। 

এছাড়াও বিড়ালকে পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করাতে হবে। বিড়ালকে বাহিরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বিড়ালকে বাড়ির মধ্যেই রাখতে হবে।  

Food and Nutrition

বিড়ালের দেহের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই বিড়ালকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। নিন্মে ইউরোপীয় বিড়ালের জন্য কয়েকটি সেরা খাবারের নাম উল্লেখ করা হলোঃ 

Open Farm Harvest Chicken Rustic Blend Wet Cat Food

পিয়র পশু প্রোটিন থেকে তৈরি বিড়ালের জন্য একটি আদর্শ খাবার হলো ওপেন ফার্ম হারভেস্ট চিকেন রুস্টিক ব্লেন্ড ওয়েট ক্যাট ফুড। এটি সাধারণত, মুরগির মাংস,  কুমড়ো, গাজর, পালং শাক, লাল মসুর ডাল, গার্বাঞ্জো বিনস (ছোলা), চিকোরি রুট, সূর্যমুখী তেল, নারকেল তেল, লবণ, ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন ডি ৩ সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট , ডি-ক্যালসিয়াম প্যানটোথেনেট, থায়ামিন মনোনিট্রেট, রিবোফ্লাভিন সাপ্লিমেন্ট, বায়োটিন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি 12 সাপ্লিমেন্ট, জিঙ্ক অ্যামিনো অ্যাসিড চেলেট, আয়রন অ্যামিনো অ্যাসিড চেলেট, কপার অ্যামিনো অ্যাসিড চেলেট, ম্যাঙ্গানিজ অ্যামিনো অ্যাসিড চেলেট, সোডিয়াম সেলেনাইট, শুকনো কেলপিল, পটোসাইড,ড্যান্ডেলিয়ন গ্রিনস, কোলিন ক্লোরাইড, টাউরিন, হলুদ দিয়ে তৈরি। এটি বিড়ালদের হাইড্রোজেন এর চাহিদা পুরনের পাশাপাশি বিড়ালের জন্য অত্যন্ত হজমযোগ্য একটি খাবার। 

Hill’s Science Diet Adult Tender Dinner Chunks & Gravy Cat Food

১ থেকে ৬ বছর বয়সী বিড়ালদের জন্য অন্যতম এবং সেরা খাবার হলো হিল’স সায়েন্স ডায়েট অ্যাডাল্ট টেন্ডার ডিনার চাঙ্কস এবং গ্রেভি ক্যাট ফুড। এটি সাধারণত  চিকেন, শুকরের মাংসের কলিজা, গমের আটা, গমের আঠা, ডেক্সট্রোজ, মডিফাইড রাইস স্টার্চ, ওট হুলস, চিকেন লিভার ফ্লেভার, ডিমের সাদা অংশ, সয়াবিন তেল, ডিক্যালসিয়াম ফসফেট, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, ফিশ অয়েল, কোলিন ক্লোরাইড, গুয়ার কার্বোনেট, আয়োডিনযুক্ত লবণ, এল-লাইসিন, ভিটামিন (ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট, থায়ামিন মনোনিট্রেট, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন সি-এর উৎস), নিয়াসিন সাপ্লিমেন্ট, পাইরিডক্সিন হাইড্রোক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম প্যানটোথেনেট, ভিটামিন বি 12 সাপ্লিমেন্ট, রিবোফ্লাভিন সাপ্লিমেন্ট, বায়োটিন, ভিটামিন ডি 3 সাপ্লিমেন্ট, ফোলিক অ্যাসিড , টরিন, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যারামেল রঙ, খনিজ পদার্থ (জিঙ্ক অক্সাইড, ফেরাস সালফেট, কপার সালফেট, ম্যাঙ্গানাস অক্সাইড, ক্যালসিয়াম আয়োডেট), বিটা-ক্যারোটিন দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু বিড়ালের খাবার। এটি বিড়ালের যৌবনে পৌছাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। এটি অত্যন্ত হজমযোগ্য একটি খাবার। এটি বিড়ালের পেশি বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করে। 

Smalls Cat Food

Smalls  হলো বিড়ালের একটি তাজা খাবার যেটাতে মুল উপাদান হিসবে মুরগি, টার্কি এবং মাছের মতো প্রিমিয়াম প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এটিতে মুরগি, মুরগির কলিজা, সবুজ মটরশুটি, মটর, পানি (প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য পর্যাপ্ত), মুরগির হার্ট, কেল, ট্রাইক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যানোলা তেল, কোলিন ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, লবণ, টরিন, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, নিয়াসিনামাইড, ফেরাস সালফেট, ভিটামিন সালফেট, জিংক সালফেট ই সাপ্লিমেন্ট, থায়ামিন মনোনাইট্রেট (ভিটামিন বি১), ক্যালসিয়াম প্যানটোথেনেট (ভিটামিন বি৫), কপার সালফেট, পাইরিডক্সিন হাইড্রোক্লোরাইড (ভিটামিন বি৬), ম্যাঙ্গানিজ সালফেট, রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২), পটাসিয়াম আয়োডাইড, ফলিক অ্যাসিড, বায়োটিন (ভিটামিন বি৭) থাকে। এটি বিড়ালের জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। এটি বিড়ালকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে এবং বিড়ালের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। 

History

 ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালের জাতটি মুলত ইতালি থেকে বিশেষ করে রোমের থেকে উদ্ভুদ একটি বিড়ালের জাত। ধারনা করা হয়, প্রাচীন সময়ে যখন সম্রাটরা রাজত্ব করত তখন ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালগুলো তাদের শিকার ক্ষমতার জন্য শস্যগার এবং ঘরবাড়ির পোকা মাকড় থেকে রক্ষা করতো। বিশ্বাস করা হয় যে, রোমানেরা যখন ইউরোপে আক্রমন করে তখন তাদের সাথে ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালগুলোও ছিল। 

গবেষকরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিড়ালদের উপর জেনেটিক পরীক্ষা করে জানতে পারেন যে, ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালগুলো উত্তর আমেরিকান বিরালগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ১৯৯২ সালে ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ফেলাইন, ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালকে একটি আলাদা বিড়ালের জাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। 

Appendix

ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালদের একটি অন্যতম গুন হলো তারা নতুন পরিবেশের সাথে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ইউরোপীয় বিড়ালগুলো পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার পাশাপাশি পৃহপালিত অন্যান্য প্রানীদের সাথেও অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ গড়ে তোলে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শর্টহেয়ার বিড়ালের সকল খুটিনাটি বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

Share with friends and families

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *