বালিবিজ বিড়াল হলো সিয়ামিজ বিড়ালদের মতো দেখতে বড় চুলের একটি গৃহপালিত বিড়ালের জাত। বালিনিজ বিড়ালগুলো বিশুদ্ধ লম্বা চুলের সিয়ামিজ বিড়াল নামেও পরিচিত। বালিনিজ বিড়ালগুলো তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের জন্য অনেকের কাছেই প্রিয় একটি বিড়াল। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বালিনিজ বিড়ালের যত্ন, খাদ্য, স্বাস্থ্য চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা করা হবে।
About
বালিবিজ বিড়ালগুলো তাদের বুদ্ধিমত্তা,বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব এবং তাদের আকর্ষনীয় সৌন্দর্যের জন্য অনেক বেশি পরিচিত। এছাড়াও এই বিড়ালগুলোর বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে। নিন্মে তা দেওয়া হলোঃ
- বালিনিজ বিড়ালগুলো ওজন সাধারণত ৬ থেকে ১১ পাউন্ডের হয়ে থাকে।
- বালিনিজ বিড়ালগুলোর দৈর্ঘ্য দেড় ফুট লম্বা হয়ে থাকে।
- বালিনিজ বিড়ালগুলো কোটের চুলগুলো অনেক লম্বা হয়ে থাকে।
- বালিনিজ বিড়ালগুলোর কোট ক্রিমি সাদা রঙের হয়ে থাকে।
- বালিনিজ বিড়ালগুলো ছোট মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।
এছাড়াও বলিনিজ বিড়ালগুলোর চোখ উজ্জ্বল নীল রঙের হয়ে থাকে। বালিনিজ বিড়ালগুলো সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বেচে থাকে।
Health and Treatment
বালিনিজ বিড়ালগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যকর একটি বিড়ালের জাত তবে তাদের সিয়ামিজ পূর্ব পুরুষোদের কারণে তাদের নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। নিন্মে বালিনিজ বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ
Amyloidosis
বালিনিজ বিড়ালগুলো একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলো অয়ামাইলয়েডোসিস। বালিনিজ বিড়ালগুলো এই রোগটি জেনেটিক উওরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ লিভার, কিডনি এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গ এবং টিস্যুতে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হয়।স্বাধারণত ১ থেকে ৫ বছরের বালিনিজ বিড়ালগুলোর মধ্যে এই বিকাশিত হওয়া শুরু করে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও বেশি মারাত্মক রুপ ধারণ। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালকে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত ঔষধ এবং খাবারের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
Progressive Retinal Atrophy
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বালিনিজ বিড়ালদের আরেকটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো প্রগতিশীল রেটিনাল অ্যাট্রোফি। এটি বিড়ালের বিড়ালের দৃষ্টিশক্তিকে হ্রাস করে এবং সম্পূর্ণ অন্ধত্বের কারণ হয়ে থাকে। এই রোগের কারণ হলো একটি রিসেসিভ জিন। যার ফলে এটির বাহক শুধু বিড়ালছানার মা বাবা হলেও বিড়ালছানার মধ্যে এটি বিকাশিত হবে। সাধারণত এই রোগটি ১.৫ থেকে ২ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। এই রোগের প্রথম লক্ষণ হলো রাতকানা। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের কোন চিকিৎসা নেই। বিড়াল এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ২ থকে ৪ বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়।
Lymphoma
লিম্ফোমা একটি সংক্রমণ জাতীয় রোগ। এই সংক্রামণের জন্য বিড়ালছানা দের টিকা প্রদান করা হয়। তবে এর পরেও বিড়ালদের প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে এটি ঘটতে পারে। এটি বিড়ালদের ইমিউন সিস্টেমকে দমিয়ে রাখে, গ্যাস্ট্রেইনটেস্টাইনালে প্রদাহ এবং ফেলাইন ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। লিম্ফোমা সাধারণত ১১ বছর বয়সী বা তার কাছাকাছি বয়সের বিড়ালদের বশি হয় থাকে। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালকে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত কেমো থেরাপি প্রদানের মাধ্যেমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
Care
বিড়ালকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং বিড়ালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবশ্যই বিড়ালের যত্ন নিতে হবে। নিন্মে বালিনিজ বিড়ালের যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- বিলানিজ বিড়ালগুলো বড় চুলের বিড়াল। তাই কোটের জট অপসরন এবং কোটের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি সপ্তাহে এক বা দুই বার ব্রাশ করাতে হবে।
- বালিনিজ বিড়ালগুলোকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে অবশ্যই খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এবং বিড়ালকে ব্যায়াম করাতে হবে।
- বিড়ালের দাঁতের এবং মাড়ির রোগ থেকে মুক্তির জন্য বিড়ালকে দাঁত ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালকে কানের রোগ থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই বিড়ালের কান পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং বিড়ালের কান পরিষ্কার করতে হবে।
- বিড়ালকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতি সপ্তাহে একদিন নখ ছেঁটে নিতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালকে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী সুষম খাদ্য খেতে দিতে হবে এবং বিড়ালকে বাহিরে আঘাত থেকে রক্ষা করতে বাড়ির মধ্যেই রাখতে হবে।
Food and Nutrition
বিড়ালের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইমিউন সিস্টেমকে অনেক বেশি শক্তিশালী করতে অবশ্যই প্রতিদিন সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। নিন্মে বালিনিজ বিড়ালের জন্য সেরা কয়েকটি খাবারের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
Merrick Backcountry Grain-Free Morsels in Gravy Real Whitefish Recipe Cuts Cat Food Pouches
বিড়ালদের জন্য বাজারের অন্যতম সেরা একটি শুকনো খাবার হলো Merrick Backcountry Grain-Free Morsels in Gravy Real Whitefish Recipe Cuts Cat Food Pouches. এটি তে বেশি পরিমান প্রোটিন এবং কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট আছে। এটিতে মূল উপাদান হিসেবে রয়েছে আসল সালমন এবং সম্পূর্ণ এবং সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি। এটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন ৯%, চর্বি ৩% এবং ফাইবার ১.২%।
Wellness Complete Health Kitten Formula Grain-Free Canned Cat Food
আসল মুরগি এবং মুরগির কলিজা থেকে বিড়ালের জন্য আদর্শ একটি ভেজা খাবার হলো Wellness Complete Health Kitten Formula Grain-Free Canned Cat Food. এটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন ১১%, চর্বি ৬% এবং ফাইবার ১%। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে শস্যমুক্ত এবং কম কার্বোহাইড্রেড দিয়ে একটি খাবার। এটি বিড়ালের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ সাধনে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।
Royal Canin Feline Selected Protein PV Loaf in Sauce Canned Cat Food
সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ভেটেরিনারি ডায়েট নির্বাচিত হাইপোঅ্যালার্জেনিক এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার হলো Royal Canin Feline Selected Protein PV Loaf in Sauce Canned Cat Food. এটি পশু চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনেও পাওয়া যায়। এটি একটি প্রোটিন যুক্ত এবং এলার্জিমুক্ত খাবার। এটিতে ইপিএ এবং ডিএইচএ রয়েছে যা বিড়ালের ত্বকের জন্য অনেক বেশি কার্যকর। এটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন ৮.৩%, চর্বি ৪.১% এবং ফাইবার ১.৯%।

History
বালিনিজ বিড়ালগুলো এসেছে সিয়ামিজ বিড়াল থেকে। ১৯০০ শতকের দিকে এই বিড়ালগুলো প্রথম রেকর্ড রয়েছে। ১৯২৮ সালে লম্বা চুলের সিয়ামিজ আমেরিকান ক্যাট ফ্যান্সিয়ারস ফেডারেশনের সাথে প্রথম শো ক্যাট হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ১৯৫০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন প্রজনন কারীরা লম্বা চুলের বিকল্প এবং পৃথক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কঠোর চেষ্টা শুরু করে। লম্বা চুলের সিয়ামিজ এই নামটি কষ্টকর হওয়ায় প্রাথমিক প্রজননকারী হেলেন স্মিথ বালিনিজ ্নর্তকীদের অনুগ্রহের একটি রাফারেন্স হিসেবে নতুন জাতের বিড়ালটিতে বালিনিজ বলে অভিহিত করে। বর্তমানে বালিনিজ বিড়ালগুলো সিএফএ, ফিফ, টিআইসিএ, এসিএফ এবং সিসিএ দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত।
Appendix
বালিনিজ বিড়ালগুলো তাদের পূর্বপুরুষ সিয়ামিজ বিড়ালগুলোর মতোই অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ, বুদ্ধিমান এবং কৌতুকপূর্ণ। বালিনিজ বিড়ালগুলো খুব সহজেই পরিবারের সকল সদস্য এবং পৃহপালিত অন্যান্য প্রানীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বালিনিজ বিড়ালদের সকল খুটিনাটি ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।