বিড়ালের বমির কারণ এবং চিকিৎসা।
সকল প্রাণির ক্ষেত্রেই বমি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার নাম। গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, চুলের বল , অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা, প্যানক্রিয়াটাইটিস , খুব তাড়াতাড়ি খাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, পরজীবী সংক্রমণ, বিষক্রিয়া, মানসিক চাপ, বিষণ্নতার মতো অনেক কারনেই বমি হয়ে থাকে। আর এই কারণেই বমি কে একটি অনির্দিষ্ট লক্ষণ বলে মনে করা হয়। তাই বমির কারণ জানা এবং বমির চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অনেক বেশি জরুরি। আর আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বমির কারণ, বমির চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা করা হবে।
বমি হওয়ার কারণ
বমি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে কিছু কারণ আছে যেগুলা গুরুতর এবং কিছু আছে সাধারণ । নিন্মে বমি হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
খুব দ্রুত খাওয়া
কিছু প্রজাতির বিড়াল আছে যারা অনেক দ্রুত খাবার খেয়ে থাকে। আর এর ফলে খাবার গুলো পাকস্থলিতে গিয়ে পুরাপুরি হজম হয় না। আর এর ফলে বিড়ালের বমি হয়ে থাকে। তাই বিড়ালকে খাবার দেওয়ার সময়ে অবশ্যই বিড়ালকে খেলনা দিতে হবে এবং পাজল ফিডারের মাধ্যমে খাবার দিতে হবে। এতে করে বিড়াল আস্তে আস্তে খাবে
খাবারে এলার্জি
বিড়ালের খাবার প্রধান উৎস হলো প্রোটিন জাতীয় খাবার। আর বাজারের অনেক প্রোটিন জাতীয় খাবারে রাসায়নিক দ্রব্য এবং অনেক বেশি পরিমাণে শস্য মিশ্রিত থাকে। যার ফলে খাবারে এলার্জির পরিমাণ বেড়ে যায়। আর বিড়াল যখন এই সকল খাবার খায় তখন ফুড এলার্জির কারনে অনেক বেশি বমি করে। আর বিড়াল যদি অভ্যাসগত ভাবে স্কার্ফ এবং বার্ফ বিড়াল হয় তাহলে বিড়ালের বমি করার সম্ভাবনা আরো অনেক বেশি থাকে। তাই বিড়ালের খাবার দেওয়ার সময়ে অবশ্যই বিড়ালকে এলার্জি মুক্ত খাবার দিতে হবে।
হেয়ারবল
বিড়ালেরা প্রকৃতিকভাবে অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন প্রাণি। তবে বিড়ালেরা দিনের একটা বড় অংশ নিজেকে বর করে। আর তাই কোটের এবং লেজের সহ অনেক অংশের আগলা চুল বিড়ালের পেটের মধ্যে প্রবেশ করে এবং পাকস্থলিতে গিয়ে হেয়ারবল গঠন করে। বিড়ালের হেয়ারবল যদি বড় আকারের হয় তখন বিড়ালের পাকস্থলি ব্যথা অনুভব হয় এবং বিড়াল বমি করে। তাই বিড়ালকে হেয়ার বল থেকে রক্ষা করতে বিড়ালের কোট কে প্রতি সপ্তাহে ব্রাশ করাতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণ
বিড়ালেরা যখন ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকে তখন বিড়ালেরা বিভিন্ন ব্যকটেরিয়া এবং ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে মূত্রাশয় সংক্রমণ, ইউটিআই, উপরের শ্বাস-যন্ত্রের সংক্রমণ এবং কানের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ যা বিড়ালের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা নামেও পরিচিত। বিড়ালের জরায়ু সংক্রমণের কারণে বিড়ালের পাকস্থলিতে সমস্যা হয় এবং বিড়াল বমি করে।
কৃমি এবং পরজীবি
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পরজীবি প্রায় শতকরা ৪৫% বিড়ালের মধ্যেই পাওয়া যায়। এটি সব বয়সী বিড়ালদেরই প্রভাবিত করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কৃমি যেমন রাউন্ডওয়ার্ম, হুকওয়ার্ম এবং টেপওয়ার্ম বিড়ালকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। আর এই সকল কৃমি এবং পরজীবিদের প্রধান উপসর্গ হলো বমি। সাধারণত কয়েকটি চিকিৎসকের থেকে কয়েকটি ডোজ প্রদানের মাধ্যমেই বিড়ালকে কৃমি এবং পরজীবি থেকে রক্ষা করা যায়।
রোগ
বমি বিড়ালের অসংখ্য রোগের জনেও প্রধান উপসর্গ হিসেবে কাজ করে। সাধারণত প্যানক্রিয়াটাইটিস, কিডনি বা লিভার ব্যর্থতা, হাইপারথাইরয়েডিজম এবং ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগগুলোর প্রাধান লক্ষণ হলো বমি।
বমির প্রকারভেদ
বমিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলোঃ দীর্ঘস্থায়ী বমি এবং তীব্র বমি। নিন্মে এই দুই বমি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
দীর্ঘস্থায়ী বমি
বিড়াল যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য বমি করে তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী বমি। সাধারণত বিড়াল প্রতিটি ঘটনার সাথে দুই একবার বমি করে। দীর্ঘস্থায়ী বমি সাধারণ প্রতিদিন এ একবার বা প্রতি মাসে একবার। দীর্ঘস্থায়ী বমি করা বিড়ালকে বাহ্যিকভাবে সুস্থ দেখালেও বিড়ালকে পশু চিকিত্সকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে এবং চেকাপ করাতে হবে। কারণে দীর্ঘস্থায়ী বমি বিড়ালের অন্যান্য রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
তীব্র বমি
যদি কোন বিড়াল স্বাভাবিক বমি না করে দ্রুত বমি করা শুরু করে তাহলে সেটা তীব্র বমি। তীব্র বমি প্রতি দিন বা প্রতি মাসে হয় না। তবে তীব্র বমি যখন হয় তখন একসাথে তিন বার বমি হয়। দীর্ঘস্থায়ী বমির থেকে তীব্র বমি অনেক বেশি গুরুতর বিড়ালের জন্য। তীব্র বমি হওয়া মাত্রই বিড়ালকে পশু চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
এছাড়াও বমির রঙের উপর ভিত্তি করে বিড়ালের বমি কে চার ভাগে ভাগ করা হয়। নিন্মে দেওয়া হলোঃ
- সবুজ, কমলা বা বাদামী
- লাল বা গোলাপি
- পরিষ্কার বা সাদা
- সবুজ
- কালো বা বাদামী
বমির রঙ অনুযায়ী বিড়ালের রোগের লক্ষণ নির্নয় অনেক সহজ হয়।
বমির চিকিৎসা
বমি যেহেতু বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তাই বমির চিকিৎসা বমির কারনের উপরে নির্ভর করবে। নিন্মে বমির চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
বমির কারণ যদি ক্যান্সার বা কিডনি রোগের কারণে হয় তাহলে বিড়ালকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়াযী চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। সাধারণত এই সকল চিকিৎসা খাবারের নিয়ন্ত্রন, বিভিন্ন ঔষধ এবং থেরাপির মাধ্যমে প্রদান করতে হয়।
বিড়াল যদি খাদ্যের এলার্জির কারনে বমি করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়ালের ডায়েট পরিবর্তন করতে হবে।
আর বিড়াল যদি হেয়ার বল বা অন্যান্য অভ্যাস গত সমস্যার কারনে বমি করে তাহলে বিড়ালের খাদ্য পরিবর্তন করে দিতে হবে এবং বিড়ালকে খেলনা প্রদান করে খেতে দিতে হবে। বিড়ালের বমি প্রতিরোধের জন্য বিড়ালকে বমি বমি ভাব প্রতিষেধক খাওয়াতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালের বমি জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতেও চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে পশুচিকিতসকের পরামর্শ ছাড়া ঘরোয়া চিকিৎসা না করাই উত্তম।
বমির প্রতিরোধ
বিভিন্ন উপায়ে বিড়ালের বমি প্রতিরোধ করা যায়। নিন্মে বিড়ালের বমি প্রতিরোধের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- বিড়ালকে খাবার দেওয়ার সময়ে খেলতে ব্যস্ত রাখা উচিত। এতে করি বিড়াল আস্তে আস্তে খাবার খাবে এবং বদ হজম হবে না। ফলে বিড়ালের বমি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
- বিড়ালকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং হেয়ারবল থেকে রক্ষা করতে বিড়ালকে প্রতি সপ্তাহে ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বিড়ালকে এলার্জি মুক্ত খাবার প্রদান করতে হবে।
- বিড়ালকে মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণিদের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালকে গাছ এবং লতাপাতা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বিড়ালকে কোন ঔষুধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়াযী খাওয়াতে হবে।
পরিশিষ্ট
বমি হওয়া বিড়ালের জন্য একটা সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই মাঝে মধ্যে বমি করা তেমন কোন উদ্বেগের বিষয় নয়। তবে প্রায়ই বমি করা এবং তীব্র বমি করা অবশ্যই বিড়ালের ক্ষতিকর। যদি বিড়াল সপ্তাহে এক থেকে থেকে দুই বারের বেশি বমি করে তাহলে অবশ্যই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়ালের বমি হওয়ার কারণ এবং বিড়ালের বমির চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।