বার্মিজ বিড়ালগুলো বার্মা থেকে উদ্ভুদ একটি পৃহপালিত বিড়ালের জাত যাদের থাই বার্মা সীমান্তের কাছে শিকড় রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। বেশিরভাগ আধুনিক বার্মিজেরা হলো ওয়াং মাউ নামক একটি স্ত্রী বিড়ালের বংশধর যেটিকে ১৯৩০ সালে বার্মা থেকে আমেরিকায় আনা হয়েছিল। বার্মিজ বিড়ালগুলো তাদের স্নেহময়, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মিশুক ব্যক্তিত্বের কারণে অনেক কাছেই পছন্দের একটি বিড়াল। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বার্মিজ বিড়ালের খাদ্য যত্ন স্বাস্থ্য চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা করা হবে।
About
বার্মিজ বিড়ালগুলো তাদের অঞ্চলিক আবাসস্থলে তামার বিড়াল নামে অনেক বেশি পরিচিত। এছাড়াও এই বিড়ালগুলোর বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে। নিন্মে বার্মিজ বিড়ালদের পরিচিতি গুলো তুলে ধরা হলোঃ
- বার্মিজ বিড়ালগুলো অনেক বেশি স্নেহময়,মিশুক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে।
- বার্মিজ বিড়ালদের ওজন সর্বোচ্চ ১৪ পাউন্ডের মতো হয়ে থাকে।
- একটি পূর্ণাঙ্গ বার্মিজ বিড়ালের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৮ ইঞ্চি অব্দি লম্বা হয়ে থাকে।
- বার্মিজ বিড়ালদের কোটের চুলগুলো ছোট হয়ে থাকে।
- বার্মিজ বিড়ালদের কোটগুলো শ্যাম্পেন, প্লাটিনাম, নীল এবং সবল রঙের হয়ে থাকে।
- বার্মিজ বিড়ালদের কোটগুলো কঠিন প্যাটার্নসের হয়ে থাকে।
এছাড়াও বার্মিজ বিড়ালগুলোর জীবঙ্কাল ১৮ বছরের হয়ে থাকে। এই বিড়ালগুলো চোখগুলো সাধারণত সোনালি রঙের হয়ে থাকে।
Health and Treatment
আধুনিক বার্মিজ বিড়ালদের তৈরি করার জন্য একটি সিয়ামিজ বিড়ালের সাথে বার্মিজ বিড়ালকে মিলিত করা হয়েছিল। তাই বার্মিজ বিড়ালদের বেশ কিছু জেনেটিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। নিন্মে বার্মিজ বিড়ালদের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোনা করা হলোঃ
Orofacial Pain Syndrome
বার্মিজ বিড়ালদের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো ওরফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের মুখ এবং মুখের তীব্র অস্বস্তি দেখানো এবং মুখ বিকৃত হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে পশুচিকিতসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। যদি দেরি করা হয় তাহলে স্ট্রেস অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে এবং এই রোগটি দাঁতের সাথে শুরু হতে পারে। এই রোগটিকে মানুষের টারিজেমিনাল নিউরালজিয়ার সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যথা নাশক ওষধ এবং থেরাপির মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
Inflammatory Bowel Disease
প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ বিড়ালের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমকে প্রবাহিত করে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ এবং জিআই ট্র্যাক্টে প্রদাহকের কারণে অন্ত্র পুরু হয়ে যায়। এটি যত পুরু হবে বিড়ালের পক্ষে সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টগুলো শোষণ করা ততই কঠিন হবে। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালদের দীর্ঘস্থায়ী বমি হওয়া, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা হ্রাসের মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে।
Hypokalemic Polymyopathy
হাইপোক্যালেমিক পলিমিওপ্যাথি বিড়ালের এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা বিড়ালের পেশীতে দুর্বলতা সৃষ্টি করে। এই রোগটি বার্মিজ বিড়ালেরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালদের অস্বাসভিক চালচালন, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালকে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। হাইপোক্যালেমিক পলিমিওপ্যাথি বিড়ালের রক্তের পটাসিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয় যার ফলে বিড়ালের পেশিতে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
Care
বিড়ালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং বিড়ালকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে বিড়ালকে প্রতিদিন যত্ন নিতে হবে। নিন্মে বার্মিজ বিড়ালদের যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরা হলোঃ
- বার্মিজ বিড়ালগুলো ছোট চুলের বিড়াল। তাই এই বিড়ালগুলোকে তেমন ব্রাশ করাতে হয় না। তবে কোটের মরা চুল অপসারণ এবং কোটকে সুন্দর রাখতে প্রতি সপ্তাহে একদিন অবশ্যই ব্রাশ করাতে হবে।
- বার্মিজ বিড়ালগুলোকে দাঁত এবং মাড়ির রোগ থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই প্রতিদিন ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালদের কানের রোগ থেকে মুক্তি পেতে দিতে প্রতি সপ্তাহে কান পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং পরিষ্কার করতে হবে।
- বিড়ালগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রতি সপ্তাহে বিড়ালগুলোর নখ ছেঁটে ছোট করে দিতে হবে।
- বিড়ালের শারীরিক বিকাশ ঠিক রাখতে খেলনা কিনে দিতে হবে যেন বিড়াল প্রতি দিন অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট খেলতে পারে।
এছাড়াও বিড়ালের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী বিড়ালকে খেতে দিতে হবে এবং বিড়ালকে অন্যান্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে গৃহের মধ্যেই রাখতে হবে।
Food and Nutrition
বিড়ালদের শরীরের সঠিক বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে অবশ্যই প্রতিদিন সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। বাজারের বিড়ালের জন্য অসংখ্য খাবার পাওয়া যায়। নিন্মে বাজারের সেরা কয়েকটি খাবারের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
Advance Adult Healthy Weight
বিড়ালের জন্য অন্যতম এবং সেরা একটি শুকনো খাবার হলো Advance Adult Healthy Weight. এটি বিড়ালের জন্য একটি প্রিমিয়াম পুষ্টি গুণ সম্পন্ন খাবার। এটিতে বিড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান আছে যা বিড়ালের সঠিক বৃদ্ধির পাশপাশি এটি বিড়ালের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও অনেক বেশি সাহায্য করে। এটি অত্যন্ত হজমযোগ্য একটি খাবার এটি বিড়ালের ইমিউন সিস্টেমকে অনেক শক্তিশালী করে।
Royal Canin Home life Indoor
উচ্চ মানের প্রাণির মাংস থেকে তৈরি বাজারের সেরা একটি শুকনো খাবার হলো Royal Canin Home life Indoor. এটি বিড়ালের জন্য সকল পুষ্টি উপাদান যুক্ত একটি খাবার। এটিতে থাকে উচ্চ মানের প্রোটিন বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধির পাশাপাশি বিড়ালের পেশিগুলোকে আর বেশি পরিমানে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এটি বিড়ালের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং বিড়ালের মলের গন্ধ কমিয়ে থাকে।
Hills Science Diet Oral Care
মুরগির মাংস থেকে সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি একটি খাবার হলো Hills Science Diet Oral Care. এটি অনন্য কিবল ফাইবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়। এটি বিড়ালের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিড়ালের দাঁতকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি প্রস্তুত করা হয় সব রকমের ক্ষতিকারক পদার্থ ছাড়া। এটিতে কোন প্রকারের গন্ধ বা রঙ ব্যবহার না করা হলেও এটি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। এটি বিড়ালের জন্য অত্যন্ত হজমযোগ্য হওয়ার কারণে বিড়ালের মলে গন্ধ কম হয়।
History
বার্মিজ বিড়ালদের উৎপত্তিস্থল বার্মায়। এই বিড়ালগুলো স্থানীয় অঞ্চলে তামার বিড়াল হিসেবে পরিচিত ছিলো। এই বিড়ালটি গত কয়েক দশক যাবত এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। প্রাচীন বই ‘দ্য ক্যাত-বুক পোয়েমস” এ ও এই বিরালটির কথা উল্লেখ আছে। ১৯৩০ সালে ডঃ জোসেফ চিজম্যান ওয়াংমাউ নামের এক মহিলা বার্মিজ বিড়ালকে বার্মা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলো। ১৯৩৬ সালে ক্যাট ফ্যান্সিয়ারস অ্যাসোসিয়েশন বিরালটিকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫২ সালে বিট্রেনে তিনটি সত্যিকার জাতের বার্মিজ বিড়ালের উতপত্তি হলে ইউনাইটেড কিংডমের গর্ভানিং কাউন্সিল আফ দ্য ক্যাট ফ্যান্সি দ্বারা স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে বার্মিজ বিড়ালগুলো সিএফএ, ফিফ, টিআইসিএ, এসিএফ দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত।
Appendix
বার্মিজ বিড়ালগুলো মিশুক ব্যক্তিত্বের হওয়ার কারণে এই বিড়ালগুলো পরিবারের সকল বয়সী সদস্য এবংগৃহপালিত অন্যান্য প্রানিদের সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এই বিড়ালগুলো মানুষদের কাছকাছি থাকতে অনেক বেশি পছন্দ করে বিশেষ করে মানুষের কোলে থাকতে বেশি পছন্দ করে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বার্মিজ বিড়ালদের সকল খুটিনাটি ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।