বিড়াল বাদামী তরল বমি
বিড়ালেরা বিভিন্ন কারণে বমি করতে পারে। বিড়ালের জন্য বমি একটি অনির্দিষ্ট রোগের লক্ষণ। তবে বাদামী তরল বমি বিড়ালের অনেক গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ। বমি অনেক রোগের লক্ষণ বহন করে। এবং বমি অসংখ্য কারনে হয়ে থাকে। তবে এদের মধ্যে এলার্জি সমস্যা, কিডনি সমস্যা, অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা, লিভারের রোগ, প্রদাহ, পরজীবি আক্রমণ অন্যতম। আর বিড়াল বমি করলেই বিড়ালের মালিকেরা কি করবেন এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়াল বাদামী তরল বমি করলে করণীয় বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিড়ালের বাদামী তরল বমির কারণ
বিভিন্ন কারণে বিড়ালের বাদামী তরল বমি হয়ে থাকে। নিন্মে বিড়ালের বাদামী তরল বমির কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাকে রক্তপাত
বাদামী বমি সাধারণত রক্তপাতের নির্দেশক হয়ে থাকে। যদি বিড়াল কিছু সময় পর পর বমি করে তাহলে সেটা খাদ্যনালীর প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে এবং এর ফলে রক্তপাত হতে পারে। আর বিড়াল কিছু সময় পরে পরে বমি না করে তাহলে বাদামী তরল বমি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্রাকের অভ্যন্তরে রক্তপাতের কারনে হতে পারে। সাধারণত বিড়ালের শরীরে কোন ভিন্ন ব্রান্ডের ইনকেশন দিলে বা বিড়াল কোন বড় আকারের হেয়ারবলের আঘাত আঘাত পেলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্যাকে রক্তপাত জমে।
বাদামী পিত্ত
কখনো কখনো বিড়ালের বাদামী তরল বমি বিড়ালের লিভার এবং পিত্ত থেকে হয়ে থাকে। তবে বিড়াল বমি করার পরে পিত্ত সাধারণত হলুদ রঙের হয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিড়ালের পিত্ত বাদামী রঙয়ের ও হয়ে থাকে তাই বলা যায় বিড়াল যে বাদামি তরল বমি করেছে সেটা বিড়ালের পিত্ত। সাধারণত বিড়ালের বাদামী রঙের বমি বিড়ালের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির সমস্যাকে চিহ্নিত করে।
খাদ্য
বিড়ালের বেশিরভাগ খাবারই শুকনো এবং টিনজাত খাবার হয়ে থাকে। আর এই খাবারগুলো বেশিরভাগই বাদামী রঙের হয়ে থাকে। যদি কোন বিড়াল অভ্যাসগতভাবে স্কার্ফ এবং বার্ফ বিড়াল হয়ে থাকে বা বিড়ালের যদি অন্ত্রের সংবেদনশীল স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে বিড়াল আংশিকভাবে হজমকৃত খাবার বা অপাচ্য খাবার গুলো বমি করতে পারে। যদি চিকিৎসক বিড়ালের পরীক্ষা করে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা না পান তাহলে বুঝতে হবে বিড়াল যে বমি করেছে তা আসলে বিড়ালের খাবার। তখন বিড়ালের খাবার পরিবর্তন করে দিতে হবে। আর প্রয়োজনে বিড়ালকে একটি কঠোর, হাইড্রোলাইজড প্রোটিন ডায়েটে রাখতে হবে।
এছাড়াও তরল বাদামী বমি করাও আরও বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। নিন্মে এগুলো দেওয়া হলোঃ
ময়লা বা মল জাতীয় বাদামী কিছু খাওয়া
- পিত্তের সাথে তীব্র চুলের বল বেধে গেলে বিড়ালের বাদামী বমি হতে পারে।
- লিভার বা কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের বাদামী বমি হতে পারে।
- পাকস্থলী/অন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন ক্যান্সার বা আলসার হলে বিড়ালের বাদামী বমি হতে পারে।
- এন্টি ফ্রিজের মতো টক্সিন থেকে বিষ ক্রিয়া হলে বিড়ালের বাদামী বমি হতে পারে।
বিড়ালের বাদামী তরল বমি হলে করণীয়
বিড়ালের মাঝে মধ্যে বমি করা কোন স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ নয় তবে বিড়াল যদি ঘন ঘন বমি করে তবে সেটা কখনই স্বাভাবিক নয়। দীর্ঘস্থায়ী বমি বা দুই তিন সপ্তাহের বেশি সময় বমি করা অবশ্যই বিড়ালের জন্য একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ। যদি বিড়াল কয়েকবার বাদামী তরল বমি করে কিংবা বিড়ালের অন্যন্য উপসর্গ দেখা দেয় যেমন, ক্ষুধা, ওজন হ্রাস, অলসতা বা ডায়রিয়া দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। নিন্মে বিড়ালের বাদামী তরল বমি হলে করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- বিড়ালকে কমপক্ষে ১২ ঘন্টার জন্য সমস্ত খাবার বন্ধ রাখতে হবে।
- বমি করার পরে বিড়ালকে অল্প পরিমাণে পানি খেতে দিতে হবে।
- বিড়ালের ডিহাইড্রেশন হলে বিড়ালকে পেডিয়ালাইট মিশ্রিত পানি ইনকেক্ট করতে হবে।
- পশু চিকিতসকের অনুমতি ছাড়া বিড়ালের কোন খাদ্য বা ঔষুধের পরিবর্তন করা যাবে না।
যদি বিড়ালের অবস্থা উদ্বেগজনক হয় তাহলে অতি শীঘ্রই বিড়ালকে পশু চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে।
বিড়ালের বাদামী তরল বমির চিকিৎসা
বমি চলতে থাকলে বিড়ালের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে পারে। তাই অনবরত বিড়ালের বাদামী বমি হলে বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক বিড়ালের রক্তের পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা, বমি বমি ভাব বিরোধি ঔষুধ এবং তরল ঔষুধ প্রদান করতে পারেন। যদি বিড়ালের পরীক্ষার ফলাফল কোন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাকে নির্দেশ করে তাহলে বিড়ালকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। যদি বিড়ালের বাদামী বমি হওয়ার পরে স্বাস্থ্যের খুব বেশি পরিমাণে অবনতি না হয় তাহলে বিড়ালকে বাড়িতেই চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে।
- বিড়ালের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে বিড়ালকে তরল থেরাপি প্রদান করতে হবে।
- বেশিরভাগ ধরণের বমির জন্য আরেকটি সাধারণ থেরাপি হল একটি অ্যান্টি-এমেটিক (অ্যান্টি-বমিটিং) ওষুধ, যা বমি বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে এবং তরলের ঘাটতি হ্রাস করতে পারে।
- প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের কারণেও বিড়ালের বমি হয়ে থাকে। যদি প্রদাহ জনক অন্ত্রের রোগের কারণে বমি হয় তাহলে বিড়ালকে প্রিডনিসোন জাতীয় ঔষুধ দিতে হবে। তবে প্রেডনিসোন জাতীয় ঔষধ প্রদানের পূর্বে অবশ্যই বিড়াল পরীক্ষার ফলাফল দেখে নিতে হবে এবং পশু চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নিতে হবে।
- দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্র বমী করা উভয় ধরণের বিড়ালদের জন্য সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য তালিকার পরিবর্তন। বিড়ালের বমি তীব্র হলে বিড়ালকে সহজে হজমযোগ্য খাবার প্রদান করতে হবে।
পরিশিষ্ট
বিড়ালদের বমি করা একটি সাধারণ বিষয়। তবে বিড়াল ঘন ঘন বমি করে তাহলে এটা বিড়ালের অন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় রুপ নিতে পারে। আর বিড়ালের বাদামী রঙের বমি বিড়ালের জন্য অনেক বেশি ঝুকিপূর্ণ। সাধারনত বিড়াল ট্রমা বা আঘাত পেলে, পাকস্থলিতে ঘা থাকলে, দীর্ঘস্থায়ী কোন প্রদাহ থাকলে বা পেটের ক্যান্সার থাকলে বিড়ালের বাদামী বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়ালের বাদামী বমি হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়সমূহ জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোণ প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।