বিড়ালের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ, শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ এবং চিকিৎসা।
বিড়ালের একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ। সাধারণত বিরালছানা এবন গৃহপালিত বিড়ালদের জন্য একটি কমন স্বাস্থ্য সমস্যা হলো উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ। উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ বিড়ালের জটিল রোগকে নির্দেশ করে। বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণে সর্দি, গলা ব্যাথার মতো লক্ষণ পরিলক্ষলিত হয়। তবে অ্যান্টিবায়োটিক এবং যত্নের মাধ্যমে বিড়ালকে এই রোগ থেকে মুক্তি করা যায়। বিশেষ করে টিকা প্রদানের মাধ্যমে এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা করা হয়। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ এবং এটির লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে একটি সঠিক ও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ
বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্র সংক্রমণিত হলে বেশ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ অনেক তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়। নিন্মে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- বিড়ালের শরীরে জ্বর হওয়া
- বেশি বেশি হাঁচি হওয়া
- চোখের থেকে সাদা স্রাব বের হওয়া
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া
- ঘন ঘন কাশি হওয়া
- বিড়ালের কন্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া
- বিড়ালের শ্বাস প্রশ্বাস বৃদ্ধি পাওয়া
- বিড়ালের ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া
- অলস হয়ে যাওয়া
- বিষণ্ণতা অনুভব করা
- দৃশটিপাত না করা
- ওজন কমে যাওয়া
- মুখে আলসার জাতীয় ঘা হওয়া
- অস্বস্তি বোধ করা
এছাড়া বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্র সংক্রমিত হলে চোখের পাতা স্ফীত হওয়া এবং বিড়ালের শারীরিক অবস্থার অনেক বেশি পরিবর্তন হওয়ার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের কারণ
সাধারণত বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্র ভাইরাসের কারণে সংক্রমিত হয়। তবে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়াও বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের জন্য দায়ী। এছাড়াও অনেক কারণেই বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ হয়ে থাকে। নিন্মে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের কারণগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
ফেলাইন হারপিসভাইরাস (এফএইচভি)
বিড়াল ছানা এবং মধ্য বয়স্ক বিড়ালেরা সাধারণত ফেলাইন হারপিসভাইরাসের মাধ্যমে বেশি সংক্রমিত হয়। সাধারণত ৯৭% বিড়াল তাদের জীবনদশায় হার্পিস ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে এবং ৮০% বিড়ালের মধ্যে এই ভাইরাসটি আজীবন সংক্রামণ ঘটায়। বিড়াল এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্র সংক্রমিত হয়। এটিতে আক্রান্ত হলে বিড়ালের কার্নিয়াতে আলসার এবং জ্বর আসে সেই সাথে বাকি সকল লক্ষণগুলোও পরিলক্ষিত হয়।
ফেলাইন ক্যালিসিভাইরাস (এফসিভি)
সারাবিশ্বের সকল প্রাজাতির বিড়ালের জন্যই একটি সংক্রমিত সাধারণ ভাইরাস হলো ফেলাইন ক্যালিসিভাইরাস। বিড়ালছানা অবস্থায় শতকরা ১০% বিড়ালেরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় আর প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালেরা জীবনদশায় শতকরা ৯০% আক্রান্ত হয়। ফেলাইন ক্যালিসিভাইরাস এ আক্রান্ত বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ গুলোর সাথে বিড়ালের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা এবং নিউমোনিয়া হওয়ার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এই ভাইরাসের ফলে বিড়ালের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, বিড়ালের মাথা এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফুলে যায় সেই সাথে বিড়ালের নাক, চোখ, কান এবং ফুটপ্যাডের উপর ঘা হয়। এমনকি এই ভাইরাসের আক্রমণে বিড়ালের চুল পড়ে যায়।
ফেলাইন ক্ল্যামাইডিওসিস
ফেলাইন ক্ল্যামাইডিওসিস হলো একটি ব্যাকটেরিয়া। এটি বিড়ালের চোখের স্রাবের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে। এটি সাধারণত অল্প বয়স্ক, প্রজননকৃত এবং গৃহপালিত বিড়ালদের অনেক বেশি সংক্রমিত করে। উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমনিত ২০% এর বেশি বিড়ালের মধ্যে ফেলাইন ক্ল্যামাইডিওসিস ব্যকটেরিয়া থাকে। এটি সংক্রমিত বিড়ালের চোখের স্রাবের সাথে কনজেক্টিভাইটস তৈরি করে যা প্রথমিকভাবে পরিষ্কার দেখালেও পরে এটি শ্লেষ্মাযুক্ত এবং হলুদ রঙের পুজের মতো দেখায়। এই ব্যাকটেরিয়ার ফলে বিড়াল ক্ষুধা হারিয়ে ফেলে এবং অনেক বেশি অলস হয়ে যায়।
ছত্রাকের সংক্রমণ
বেশ কয়েকটি ছত্রাকের প্রজাতি বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের রোগের কারণ হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ছত্রাকটি হলো ক্রিপ্টোকোকাস নিওফরম্যান্স। বিড়ালেরা যখন শ্বাস নেয় তখন এই ছত্রাক টি বিড়ালের মধ্যে প্রবেশ করে এবং শ্বাস নালী সহ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িতে পড়ে। এই ছত্রাকের কারনে নাক মুখের ফোলাভাব পরিলক্ষিত হয় এবং হাঁচি কাশির মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও এটি বিড়ালের ওজন হ্রাস, কন্ঠোস্বরের পরিবর্তন এবং ফুসফুসে ছড়িয়ে ফেলে দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার কারণ হয়ে থাকে।
শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসা
বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে আসতে হবে। নিন্মে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসা প্রদানের ধাপগুলো উল্লখ করা হলোঃ
বেশির ভাগ বিড়ালের জন্য প্রথমে লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয় অতঃপরে বিড়ালের চিকিৎসা শুরু করা হয়। সাধারণত বেশিরভাগ বিড়ালের ক্ষেত্রে উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ ভাইরাসের কারনে হয়ে থাকে তাই বিড়ালকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিড়ালের চোখের সাদা স্রাব এবং লাল চোখের জন্য মলম ব্যবহার করা হয়। সেই সাথে বিড়ালের বন্ধ নাক এবং নাকের স্রাব নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন ঔষুধ ব্যবহার করা হয়।
উপরের শ্বাস যন্ত্র সংক্রমিত হলে বিড়ালকে অবশ্যই শান্ত এবং আরামদায়ক রাখতে হবে তাই বিড়ালের চোখের এবং নাকের স্রাব আলতো করে মুছে ফেলতে হবে এবং পশু চিকিৎসকের নির্ধারিত ঔষুধ গুলো সময় অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্র সংক্রমিত হলে বিড়ালের ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যায় এবং ক্ষুধা হ্রাস পায় তাই বিড়ালকে টিনজাত খাবার খাওয়াতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার প্রদান করতে হবে। যদি বিড়াল খাবার না খায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ ১০ দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী থাকে। যদি বিড়ালের অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে বিড়ালকে পশু হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিড়ালের শিরায় তরল থেরাপি এবং অক্সিজেন থেরাপি প্রদান করতে হবে।
শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের প্রতিরোধ
বিড়ালকে উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নিন্মে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের প্রতিরোধের বেশ কিছু পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলোঃ
- বিড়ালকে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি প্রদান করতে হবে। এবং অসুস্থ বিড়ালের জন্য আলদা ঘর তৈরি করতে হবে।
- বিড়ালছানা অবস্থায় টিকা প্রদান করতে হবে এবং প্রতি বছর যে ডোজগুলো আছে সেগুলো প্রদান করতে হবে।
- বিড়ালকে প্রতি মাসে প্রথমিক চেকাপের জন্য চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে।
- বিড়ালকে শুষ্ক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখতে হবে। এবং অসুস্থ বিড়ালকে আলাদা স্থানে রাখতে হবে।
- বিড়ালের লিটার বক্স নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং বিড়াল রুটিন অনুযায়ী খাবার প্রদান করতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালের সুস্থতা নিশ্চিত এবং প্রতিদিন বিড়ালকে খেলতে দিতে হবে এবং বিড়ালের পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
পরিশিষ্ট
বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ সকল প্রজাতির বিড়ালদের জন্য একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই বিড়ালের মধ্যে লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে এমনি জরুরি অবস্থা হলে বিড়ালকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। বিড়ালকে সুস্থ রাখতে এবং বিড়ালকে উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হারপিসভাইরাস এবং ক্যালিসিভাইরাসের ভ্যাকসিনগুলো প্রদান করতে হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়ালের উপরের শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।