Manx cats are The Cats with No Tails That Will Steal Your Heart

গৃহপালিত বিড়ালগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় জাত হলো ম্যাঙ্কস বিড়াল।  বিড়ালের এই জাত গুলো আইল অফম্যান-এ উদ্ভুত হয়েছে। এদের প্রাকৃতিক ভাবে মিউটেশন ঘটার কারণে লেজটি সাধারণ বাকী সকল বিড়ালদের থেকে ছোট হয়ে থাকে। এদের শিকারি স্বভাবের কারণে অনেকেরই পছন্দের বিড়াল হলো ম্যাঙ্কস। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ম্যাঙ্কস বিড়ালের ইতিহাস, স্বাস্থ্য চিকিৎসা এবং যত্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

About

ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো তাদের মাঝারি আকার, সোনালী চোখ এবং ছোট লেজের জন্য অনেক বেশি পরিচিত। এছাড়াও ম্যাঙ্কস বিড়ালের বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে। নিন্মে এগুলা দেওয়া হলোঃ 

  • ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলোর ম্যাঙ্কস নাম ছাড়াও রাম্পি এবং স্টাবিন নামে পরিচিত। 
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো তাদের সহজ সরল, স্নেহময় এবং সামাজিক ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে। 
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলোর ওজন ৮ থেকে ১২ পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে।
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালদের দৈর্ঘ্য ১৪ থেক ১৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। 
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলোর কোটের চুলগুলো ছোট এবং লম্বা দুই রকমেরই হয়ে থাকে। 
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালের কোটগুলো সাদা, নীল, কালো, লাল রঙের হয়ে থাকে। 
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালের চোখগুলো সাধারণত সোনালি, তামা, সবুজ, নীল রঙের হয়ে থাকে। 

এছাড়াও এই বিড়ালগুলোর আয়ু ১৪ থেকে ১৬ বছর হয়ে থাকে। এই বিড়ালগুলো নির্ভুল ভাবে বাড়ির ইঁদুর পকামাকড় শিকার জন্য অনেক বেশি পরিচিত।  

Health and Treatment

ম্যাঙ্কস বিভিন্ন সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি দায়িত্বহীন প্রজননের কারণে প্রজনন জনিত অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো কিছু কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা অন্যান্য বিড়ালদের থেকে অনেক বেশি গুরুতর। নিন্মে ম্যাঙ্কস বিড়ালদের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

Manx syndrome

ম্যাঙ্কস সিনড্রোম এমন একটি রোগ যেটার কারণে মেরুদন্ডের শেষের অংশ, স্যাক্রাম এর গঠন সঠিকভাবে হয় না। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের মুত্রাশয় এবং অন্ত্র নিয়ন্ত্রনে অক্ষমতার মতো অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই রোগের আক্রান্ত বিড়াল অস্বাভাবিক এবং হুপিং গাইট অনুভব করে। দুর্ভাগ্যবশত এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এটি কেস বাই কেসের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা করা হয়। 

Hereditary Deafness

ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলোর মধ্যে বংশগত বধিরতা রোগটির কিছু প্রবনতা দেখা যায়। তবে বধিরতা অনেক বিড়ালের জন্যই কোন উল্লেখযোগ্য সমস্যা নয়। এটির কোন চিকিৎসা যোগ্য রোগ না হলেও বিড়ালগুলো পুরোপুরি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে। তবে অবশ্যই বধির বিড়ালকে বাড়ির ভিতরেই রাখতে হবে। 

কানের সংক্রমণ এবং পলিপের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে কিছু ক্ষেত্রে বিড়ালেরা বাধির হয়ে যায়। তবে, জন্মগত এবং বংশগত বধির বিড়ালদের কোন চিকিৎসা নেই। 

Feline Lower Urinary Tract Disease

ফেলাইন লোয়র ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ডিজিজ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি তুলনামুলকভাবে মহিলা বিড়ালের থেকে পুরুষ বিড়ালদের বেশি হয়ে থাকে। পুরুষ বিড়ালদের এই রোগের কারণে মূত্রনালীতে স্ফটিক তৈরির ফলে মুত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি পারে যেটি বিড়ালের জন্য একটি মারাত্বক স্বাস্থ্য সমস্যা।

এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।  বিড়ালদের UTI চিকিৎসা এবং পশুচিকিতসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ খাওয়াতে হবে। 

Megaclone

মেগাক্লোন হলো এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যেটির ফলে কোলন বা বৃহৎ অন্ত্রের নীচের অংশের বৃদ্ধি ঘটে। যখন কোলন বড় হয় তখন এটি ইমপেনশন নামে পরিচিত কোষ্ঠকাঠিন্য গুরুতর রুপ নিয়ে থাকে। এটি বিড়ালের জন্য অস্বস্তিকর এবং একই সাথে এটি বিড়ালের ক্ষুধা হ্রাস করে দেয়। 

মেগাক্লোনের যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে এটি মারাত্মক রুপ নিতে পারে। এটির কোন নিরাময় চিকিৎসা না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। 

Care

বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিড়ালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবশ্যই বিড়ালকে নিয়মিত যত্ন করতে হবে। নিন্মে ম্যাঙ্কস বিড়ালের যত্ন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ 

  • ম্যাঙ্কস বিড়ালকে প্রতি দিন ৩০ থেকে ৬০ মিনিট খেলতে দিতে হবে। অনেক বিড়ালের মতো ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো দৌড়াতে, লাফ দিতে এবং আরোহণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই বিড়ালের চাহিদা পূরণের জন্য অবশ্যই বিড়ালকে খেলতে দিতে হবে। 
  • ম্যাঙ্কস বিড়ালের ডাবল কোট থাকে তাই বিড়ালকে চিরুনি দিয়ে ব্রাশ করাতে হবে। 
  • বিড়ালের দাঁতের এবং মাড়ির সমস্যা এড়াতে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করাতে হবে। 
  • বিড়ালের কানের রোগ থেকে বিড়ালকে রক্ষা করতে অবশ্যই কান পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং কান পরিষ্কার করতে হবে। 
  • বিড়ালকে রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে হবে। 

এছাড়াও বিড়ালের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচারণ করতে হবে। সময় মতো টিকা প্রদান করতে হবে এবং বিড়ালকে মাঝে মাঝে পশু চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।  

Food and Nutrition

অন্যান্য বিড়ালের মতো ম্যাঙ্কস বিড়ালদেরও প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, চর্বি এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। বাজারে বিড়ালের জন্য অনেক খাবার পাওয়া যায়। নিন্মে বাজারের সেরা কয়েকটি খাবারের নাম দেওয়া হলোঃ  

HILLS SCIENCE DIET Adult Indoor Dry Cat Food

ইনডোর বিড়ালদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে  HILLS SCIENCE DIET Adult Indoor Dry Cat Food. এটি কৃত্রিম রং,স্বাদ ছাড়াই প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি। এটি বিড়ালের জন্য একটি হজমযোগ্য খবার। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিশ্রণ আছে যেটি বিড়ালের ইমিউওন সিস্টেমকে সহয়তা করে। এটিতে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে যা বিড়ালের ওজন বৃদ্ধি করে।  

ROYAL CANIN Indoor Adult Dry Cat Food

মধ্যস্থ এবং প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালদের জন্য অন্যতম সেরা একটি ড্রাই ফুড হলো ROYAL CANIN Indoor Adult Dry Cat Food. এটি অত্যন্ত হজম যোগ্য খাবার হওয়ার কারণে বিড়ালের মলে দুর্গন্ধ কম হয়। এটি পর্যাপ্ত ক্যালরি যোগান দেওয়ার পাশাপাশি এটি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করে। এটি বিড়ালের চুলের গঠন ঠিক রাখতে সহায়তা করে। 

ADVANCE Adult Chicken And Salmon Medley Wet Cat Food 

সুপার প্রিমিয়াম প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি টিনজাতকৃত  বিড়ালের অন্যতম একটি ড্রাই ফুড হলো  ADVANCE Adult Chicken And Salmon Medley Wet Cat Food. এটি প্রাপ্ত বয়স্ক বিড়ালের জন্য একটি সম্পূর্ণ সুষম খাদ্য। এটি বিড়ালের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিড়ালের ইমিউন সিস্টেমকেও অনেক বেশি শক্তিশালী করে থাকে। এটি তে কৃত্রিম রঙ, প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় না।  

তবে ম্যাঙ্কস বিড়ালদের গরুর দুধ দেওয়া উচিত না, কারণ ল্যাকটোজ বিড়ালের অন্ত্রে জমা হতে পারে এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। 

History

ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো আইরিশ সাগরের আইল অফ ম্যান থেকে আসা একটি প্রাচীন বিড়ালের জাত। প্রাথমিকভাবে, আইল-এ প্রজাতির নামের বানানটি সাধারণত “ম্যাঙ্কস” বা “স্টাবিন” হিসেবে পরিচিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে আইল অফ ম্যান-এ স্থানীয় বিড়ালদের একটি উল্লেখযোগ্য হলেও এটি হ্রাসপ্রাপ্ত বিড়াল। ম্যাঙ্কাস বিড়ালদের  শিকারের দক্ষতার কারণে, ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো ঐতিহাসিকভাবে কৃষকদের কাছে ইঁদুর সমস্যা সমাধান করার জন্য  এবং সমুদ্র ভ্রমণের সময়ে সঙ্গীদের সাহায্য করার জন্য একটি জনপ্রিয় বিড়াল।

১৮০০ দশকের শেষের দিকে ম্যাঙ্কাস বিড়ালগুলো একোটি স্বতন্ত্র জাত হিসেবে বিড়ালে শো গুলোতে প্রদর্শিত হওয়া শুরু করে। পোষা প্রানীর প্রজনন এবং প্রদর্শন বিশেষজ্ঞ চার্লস হেনরি লেন, ১৯০৩ সালে প্রথম ব্রিড স্ট্যান্ডার্ড সহ গ্রেট ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত ক্যাট শোতে আসল ম্যাঙ্কস বিড়ালকে প্রদর্শন করেন। ম্যাঙ্কস বিড়াল ছিলো ক্যাট ফ্যান্সিয়ারস অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা স্বীকৃত প্রথম বিড়ালের জাতগুলোর মধ্যে একটি। ১৯২০ এর দশকে ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো উত্তর আমেরিকায় বিড়ালের স্বতন্ত্র জাত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।   

Appendix

ম্যাঙ্কস বিড়ালগুলো একটি জনপ্রিয় বিড়ালের জাত। তাদের সুন্দর এবং ববড লেজ দেখে সহজেই শনাক্ত করা যায়। এই বিড়ালগুলো ইঁদুর কিংবা পোকামাকড় শিকার করা অনেক বেশি পছন্দ করলেও এরা কখনই পরিবারের সদস্যদের প্রতি আক্রমণাত্মক আচারণ করে না। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ম্যাঙ্কস বিড়ালের সকল খুটিনাটি বিষয়ে জানতে পেরেছেন । এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

Share with friends and families

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *