নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালগুলো হলো ইউরোপে উদ্ভুত গৃহপালিত একটি বিড়ালের জাত। প্রাকৃতিক এই বিড়ালের জাতটি প্রচন্ড ঠান্ডা জলবায়ুর সাথেও খাপ খাইয়ে নিতে পারে। নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের একটি দীর্ঘ এবং ঘন আবরনের কোট রয়েছে যা তাদের পূর্বপুরুষদের নরওয়ের বনে শতাব্দি ধরে বেচে থাকতে সাহায্য করেছিল।
নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলোর বন্ধুত্বপূর্ণ, ইন্টারেক্টিভ, স্বাধীন এবং দুঃসাহসিক ব্যক্তিত্বের কারণে অনেকেই এই বিড়ালের জাতটিকে পৃহপালিত বিড়াল হিসবে নির্বাচন করে থাকেন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালের ইতিহাস, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা আরও ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
About
নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো তাদের শান্ত এবং স্নেহময় বৈশিষ্ট্যের জন্য নরওয়েতে স্কোগকোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েজি বিড়াল নামে পরিচিত। এছাড়াও নরওয়েজিয়ান বিড়ালদের অসংখ্য পরিচিত রয়েছে।
- নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ, দুঃসাহসিক এবং স্বাধীন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে।
- নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলোর ওজন সাধারণত ১৮ পাউন্ডের হয়ে থাকে।
- নরওয়েজিয়ান বিড়ালদের নাক থেকে লেজের দৈর্ঘ্য ৩৬ ইঞ্চি অব্দি হয়ে থাকে।
- নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো চোখগুলো সবুজ, সোনালি, তামাটে বা নীল রঙের হয়ে থাকে।
- নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলোর কোট ঘন আন্ডারকোট এবং লম্বা চুলের হয়ে থাকে।
এছাড়াও নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো কোট সাধারণত সাদা চিহ্নযুক্ত বা চিহ্নছাড়াই হয়ে থাকে। এদের কোটগুলো সাধারণত ট্যাবি প্যাটার্নের হয়ে থাকে।
Health and Treatment
বিরালকে সুস্থা রাখতে এবং বিড়ালের আয়ুস্কাল দীর্ঘ করতে অবশ্যই বিড়ালদের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার দিকটিকে নজর দিতে হবে। বিড়লেরা অসুস্থ হলে আমাদের মতো বলতে পারে না তাই আমাদের অবশ্যই তাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নিন্মে নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
Hypertrophic Cardiomyopathy
নওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের একটি সাধারণ হৃদরোগ হলো হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের হৃদপিন্ডের দেওয়ালের পেশীর একটি অংশ ঘন হয়ে যায়। এর ফলে ঘন হওয়া অঙ্গটির কার্যকারীভাবে রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ বেড়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। এই লক্ষন গুলো দেখা দিলেই বিড়ালকে পশু চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে। ঔষুধের মাধ্যমে এই বিড়ালকে এই রোগের থেকে রক্ষা করা যায়।
Hip Dysplasia
নওয়েজিয়ান বিড়ালদের একটি বংশগত রোগ হলো হিপ ডিপ্লাসিয়া। এটি বিড়ালের নিতম্ব বিকৃত এবং জয়েন্টগুলোর বিকাশে বাধা প্রদান করে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের জয়েন্টগুলো আলগা হওয়া শুরু করে, বিড়াল হেলেদুলে চলাফেরা করে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে এবং এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালকে দিয়ে প্রজনন করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সাধারণত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ঔষুধ, সার্জারি এবং শারীরিক থেরাপি প্রদানের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
Glycogen Storage
নওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের আরেকটি বংশগত রোগ হলো গ্লাইকোজেন স্টোরেজ। এটি বিড়ালদের গ্লাইকোজেন বিপাক করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে এর ফলে শরীরে গ্লাইকোজেন তৈরি হওয়ার ও বিভিন্ন অঙ্গের কর্মহীনতার কারণ হতে পারে।
এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালদের জ্বর, পেশি দুর্বলতা এবং কাপুনি থাকে। এই লক্ষন গুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।সাধারণত পর্যবেক্ষণ, উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রদানের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রাদন করা হয়।
Pyruvate Kinase Deficiency
পাইরুভেট কিনেস হলো এমন একটি এনজাইম যেটি লোহিত রক্ত কণিকায় পাওয়া যায়। এটি রক্তের লোহিত কণিকাগুলো বেচে থাকার জন্য শক্তি উৎপাদন করে দেয়। পাইরুভেট কিনেসের ঘাটতি হলে লোহিত রক্তকণিকা গুলো সাধারনত যতদিন বেচে থাকার কথা তার থেকে থেকে কম দিন বাচে। এবং এর ফলে বিড়াল অ্যানিমিক হয়ে যায়। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের মধ্যে অলসতা এবং রক্তস্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণ এই রোগের কোন প্রতিকার নেই তবে ব্যায়াম এবং সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
Care
বিড়ালের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং সুস্থ রাখাতে অবশ্যই বিড়ালের নিয়মিত যত্ন নেওয়া উচিত। নিন্মে নরওয়েজিয়ান বিড়ালদের যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো বর্ণনা করা হলোঃ
- নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালগুলোর ঘন এবং জটালো কোট থাকে তাই এই বিড়ালগুলো সাপ্তাহিক ব্রাশিং করাতে হবে। গ্রীষ্মের মৌসুমে এই বিড়ালগুলো তাদের আন্ডারকোটগুলো গলিয়ে দেয় তাই এই সময়ে বেশি বেশি ব্রাশিং করাতে হবে।
- বিড়ালকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিমাসে গোসল করাতে হবে।
- বিড়ালকে দাঁতের এবং মাড়ির রোগ থেকে রক্ষা করতে দাঁত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করাতে হবে।
- বিড়ালের কানে অনেক ময়লা জমে থাকে তাই বিড়ালের কানকে পরিষ্কার করতে হবে।
- বিড়ালের নখগুলো পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে নখ গুলো ছেঁটে দিতে হবে।
এই বিড়ালগুলো খেলতে অনেক বেশি পছন্দ করে তাই বিড়ালকে খেলনা কিনে দিতে হবে এবং বিরালকে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী খবার দিতে হবে।
Food and Nutrition
নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালগুলো একটি অন্যন্য জাতের বিড়াল। তবে শ্রেণীবিন্যাসগত ভাবে এটি গৃহপালিত বিড়ালের জাত হওয়ার কারণে এই বিড়ালদের খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা অন্যান্য বিড়ালদের মতোই হয়ে থাকে। নিন্মে নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের খাদ্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ
Royal Kenin Indoor
বিড়ালদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি খাবার হলো রয়্যাল কেনিন ইনডোর। এটি বিড়ালের ক্ষুধা নিবারণ এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও বিড়ালের শরীরের অধিক ক্যালরি সরবারহ করে থাকে। এটি নির্দিষ্ট ধরণের ফাইবার সামগ্রী থাকে যা কম সক্রিয় ইনডোর উইজির জন্য উপযুক্ত একটি খাবার।
Canidy Grain Free Pure C
বিড়ালদের জন্য সম্পূর্ন প্রাকৃতিকভাবে এবং সীমিত পরিমাণ সালমন খাবার ও মেনহেডেন মাছ দিয়ে ক্যানিডি গ্রেইন ফ্রি পিউর সি খাবার টি প্রস্তুত করা হয়। এটি বিড়ালের জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার তেমনি এটি বিড়ালদের জয়েন্টগুলো অনেক বেশি মজবুত করে থাকে এর পাশাপাশি এই খাবারগুলো বিড়ালের খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে।
Jiu Peek
বিড়ালদের জন্য প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির ফ্রিজ-শুকনো খাবার হলো জিউই পিক। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ মাংস থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের জন্য অনেক ভালো মানের একটি খাবার।
Advance Healthy Weight
বিড়ালদের জন্য সুপার প্রিমিয়াম শুকনা খাবার হলো অ্যাডভান্স হেলথি ওয়েট। এটি বিড়ালদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিড়ালের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে অনেক বেশি সাহায্য করে। এইটিতে ভুসি এবং পিচ্ছিল এলমের ছাল যোগ করা করা থাকে যা চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে।
History
নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালগুলোর পূর্বপুরুষদের ভাইকিংদের দ্বারা ১০০০ খ্রিস্টাব্দের কিছু সময় পরে গ্রেট ব্রিটেন থেকে নরওয়েতে আনা হয়েছিল এবং ১৪ শতকের দিকে ক্রসেডারদের দ্বারা লম্বা চুলের বিড়ালগুলো নরওয়েতে আনা হয়েছিল। নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো অত্যন্ত পর্বতারোহী হওয়ার কারণে লেখক ক্লেয়ার বেসাল্ট বিশ্বাস করেন যে, স্কোগকাট লোককাহিনী অনুধিক নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালের পুর্বপুরুষদের সম্পর্কে লিখা হয়েছে।
১৯৩৮ সালে নরওয়ের আসলোতে নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালদের জন্য প্রথম নরওয়েজিয়ান ফরেস্ট ক্যাট ক্লাব গঠিত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই ক্লাবটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫০ এর দশকে রাজা ওলাভ নরওয়েজিয়ান বন বিড়ালকে নরওয়ের জাতীয় বিড়াল হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালে এটি ইউরোপে এবং ১৯৯৪ সালে আমেরিকান ক্যাটি ফ্যান্সিয়ার অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা নিবন্ধিত হয়। ১৯৭৮ সালে এটি সুইডেনের সরকারি বিড়ালের জাত হিসেবে স্বীকৃত পায়।
Appendix
নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো পবিবারের অন্যান্য পোষা প্রাণীদের সাহচর্য পছন্দ করলেও এরা অন্যান্য প্রানীদের সাথে অবিছিন্ন শারীরিক যোগাযোগ একেবারেই অপছন্দ করেন। নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো কম তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারে এবং এই বিড়ালগুলো শান্ত ও অভিযোজিত ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে। আশা করি, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে নরওয়েজিয়ান বিড়ালের সকল খুটিনাটি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।