Persian Cats are The Cat That’s Good with Children

গৃহপালিত বিড়ালদের মধ্যে একটি অন্যতম এবং জনপ্রিয় বিড়ালের জাত হলো পার্সিয়ান। এরা লম্বা চুলের বিড়ালের জাত যারা মূলত তাদের গোলাকার মুখ এবং ছোট আকৃতির মুখের দ্বারা চিহ্নিত। পৃথিবীর প্রাচীন গৃহপালিত বিড়ালের জাতের মধ্যে অন্যতম একটি বিড়ালের জাত হলো পার্সিয়ান। তাদের মিস্টি কমল এবং স্নেহ ব্যক্তিত্বের জন্য অনেক নিকট এটি একটি প্রিয় বিড়ালের জাতে পরিনত হয়েছে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে পার্সিয়ান বিড়ালের খাদ্য, যত্ন, স্বাস্থ্য চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং পুর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হবে। 

 

About

পার্সিয়ান বিড়ালগুলো পার্সিয়ান লংহেয়ার  নামেও অনেক বেশি পরিচিত। এছাড়াও এই বিড়ালগুলোর বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে। নিন্মে পার্সিয়ান বিড়ালের পরিচিতি গুলো তুলে ধরা হলোঃ 

  • পার্সিয়ান বিড়ালগুলো সাধারণত মিষ্টি, কোমল এবং স্নেহময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। 
  • পার্সিয়ান বিড়ালগুলোর ওজন ৭ থেকে ১২ পাউন্ডের হয়ে থাকে। 
  • পার্সিয়ান বিড়ালদের দৌর্ঘ্য ১৪ থেকে ১৭ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। 
  • পার্সিয়ান বিড়ালদের কোটগুলো সলিড(নীল, কালো, সাদা, লাল, ক্রিম এবং চকলেট), রুপালী, সোনালি এবং হিমালয় রঙের হয়ে থাকে। 
  • পার্সিয়ান বিড়ালদের চোখগুলো তামা, নীল, সবুজ, হ্যাজেল এবং নীল-সবুজ রঙের হয়ে থাকে। 

এছাড়াও পার্সিয়ান বিড়ালদের গড় আয়ু ১৫ থেকে ২০ বছরের হয়ে থাকে।  

Health and Treatment

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশুদ্ধ বিড়ালের জাত গুলর মধ্যে একটি হলো পার্সিয়ান। তবে অন্যান্য বিড়ালদের মতো এই বিড়ালগুলোর ও বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। নিন্মে পার্সিয়ান বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে বর্ণনা করা হলোঃ 

Polycystic Kidney Disease

পার্সিয়ান বিড়ালের সবচেয়ে কমন রোগ হলো পলিসিস্টিক কিডনি রোগ। এটি পার্সিয়ান বিড়ালদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমানে দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের কিডনির মধ্যে সিস্ট তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পায়।  এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের অত্যাধিক তৃষ্ণা, অত্যাধিক প্রাস্রাব, বমি এবং ক্ষুধা হ্রাসের মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণ গুলো দেখা মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত কিডনির মধ্যকার সিস্টের অপসারণ, প্রপার ডায়েট এবং ঔষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। 

Hypertrophic Cardiomyopathy

পার্সিয়ান বিড়ালদের জন্য অন্যতম ঝুকিপূর্ণ একটি রোগ হলো পাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি।  এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালদের হৃদপিন্ডের পেশিগুলো ঘন হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এটি বিড়ালের হার্ট ফেইলের প্রবনতা কে অনেক বেশি বৃদ্ধি করে দেয়। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালের শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দনের সময়ে শব্দ হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণ গুলো দেখা মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত প্রোপার ডায়েট চার্ট অনুসরণ এবং ঔষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। 

Brachycephalic Airway Syndrome

পার্সিয়ান বিড়ালদের নাক ছোট হয় জন্য এটি প্রায়শই ব্র্যাকসেফিলিক এয়ারওয়ে সিনড্রোমের দিকে পরিচালিত করে। এই রোগে আক্রান্ত বিড়ালদের শ্বাস নিতে অসুবিধা, চোখে দেখতে সমস্যা, কাশির মতো লক্ষণ হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার মুখ সম্পূর্ণ চ্যাপ্টা হবার মতো গুরুতর লক্ষণ ও পরিলক্ষিত হয়। এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। এই রোগের কোন নিয়ন্ত্রন নেই তবে, দায়িত্বশীল প্রজনন, শুষ্ক পরিবেশ এবং স্থুলতা কমানোর মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। 

Care

বিড়ালকে সুরক্ষিত রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই বিড়ালের যত্ন নিতে হবে। নিন্মে পার্সিয়ান বিড়ালের যত্ন নেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ 

  • পার্সিয়ান বিড়ালদের চুলগুলো অনেক বড় সাইজের হয়ে থাকে। তাই বিড়ালের চুলগুলোর জট এড়াতে এবং মরা চুলের থেকে মুক্তি দিতে অবশ্যই প্রতি সপ্তাহে বিড়ালকে ব্রাশ করাতে হবে। 
  • বিড়ালকে দাঁত এবং মাড়ির রোগ থেকে রক্ষা করতে বিড়াকে প্রতিদিন ব্রাশ করাতে হবে। 
  • বিড়ালকে কানের রোগের থেকে রক্ষা করতে প্রতি সপ্তাহে কান পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং বিড়ালের কানে কোন প্রকারের ময়লা থাকলে সেগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে। 
  • বিড়ালকে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতি সপ্তাহে বিড়ালের নখ গুলোকে ছেঁটে ছোট করে দিতে হবে। 
  • পার্সিয়ান বিড়ালগুলো অনেক বেশি খেলাধুলা পছন্দ করে তাই বিড়ালকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৬০ মিনিট খেলাধুলা করার সুযোগ করে দিতে হবে। 

এছাড়াও বিড়ালকে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী খাবার খেতে দিতে হবে এবং বিড়ালকে বাইরের প্রাণি থেকে রক্ষা করতে বিড়ালকে বাসার মধ্যেই রাখতে হবে। 

Food and Nutrition

শরীরের সঠিক বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করার জন্য বিড়ালকে অবশ্যই প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। নিন্মে পার্সিয়ান বিড়ালের জন্য সেরা কয়েকটি খাবারের নাম উল্লেখ করা হলোঃ  

Royal Canin Persian Dry Cat Food

বিড়ালের দাঁতের সুস্থতা এবং হজমযোগ্য একটি শুষ্ক খাবার হলো Royal Canin Persian Dry Cat Food. এটি পার্সিয়ান বিরালদের জন্য স্পেশাল ভাবে ডিজাইন করা একটি খাবার। এটিতে কোন প্রকারের ক্ষতিকারক উপাদান নেই। এটিতে মুল উপাদান হিসেবে রয়েছে মুরগির উপজাত খাবার, মুরগির চর্বি, ব্রুয়ার চাল, গমের আঠা এবং ভুট্টা। এটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন ২৮% এবং চর্বি ২৮%। এটি বিড়ালের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং এটি অত্যন্ত হজমযোগ্য একটি বিড়ালের খাবার।  

Purina Cat Chow Hairball & Weight Dry Cat Food

বিড়ালের জন্য মুরগি থেকে তৈরি সেরা খাবার হলো Purina Cat Chow Hairball & Weight Dry Cat Food. এটিতে মুল উপাদান হিসেবে রয়েছে মুগরির উপজাত খাবার, হোল গ্রেইন কর্ণ, সয়া ফ্লাওয়ার এবং হোল গ্রেইন গম। এটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন ৩০% এবং চর্বি ৫%। এটি বিড়ালের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার এটিতে কোন প্রকারের কৃত্রিম রঙ এবং স্বাদ নেই। এটি বিড়ালের ওজন নিয়ন্ত্রন করতে এবং বিড়ালের চুলগুলোকে অনেক বেশি সতেজ রাখতে সহায়তা করে। এটিতে বিড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। 

Wellness CORE Grain-Free Indoor Dry Cat Food

পার্সিয়ান বিড়ালের জন্য শস্য মুক্ত সেরা শুকনো খাবার হলো Wellness CORE Grain-Free Indoor Dry Cat Food. এটিতে মুল উপাদান হিসেবে রয়েছে ডিবোনড চিকেন, টার্কি, মুরগির খাবার, মোটর এবং আলু। এটিতে পুষ্টি উপাদান হিসেবে রয়েছে প্রোটিন ৪৫% এবং চর্বি ১৮%। এটি পার্সিয়ান বিরালকে অনেক বেশি সক্রিয় রাখার পাশাপাশি বিড়ালকে চর্বিহীন রাখতেও অনেক বেশি সহায়তা করে। এটিতে রয়েছে প্রোবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিড়ালের পেট এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করা। এটি ফিলার এবং সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপাদান মুক্ত একটি খাবার। 

History

গৃহপালিত বিড়ালরা বহু শতাব্দি ধরেই মানুষের সঙ্গে ছিলো। পার্সিয়ান বিড়ালের জাতটি পার্সিয়ান লংহেয়ার নামেও পরিচিত।  পার্সিয়ান বিড়ালের এই জাতটি পারস্য (বর্তমানের ইরান) মায়ানমার, চীন এবং রাশিয়ার অন্যান্য লম্বা কেশ যুক্ত বিড়ালের জাতের থেকে বিকাশিত হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয় পার্সিয়ান বিড়ালদের ১৬২০ সালে খোরাসান থেকে প্রথম ইতালিতে আমদানি করা হয়। 

১৯ শতকের পরে থেকে এটি আফগানিস্তান এবং ইরান থেকে লম্বা চুলের এক প্রজাতির বিড়াল রপ্তানি করা হয়। ১৮৭১ সালে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে হ্যারিসন ওয়েয়ার দ্বারা আয়োজিত সংগঠিত বিড়াল শোতে প্রথম পার্সিয়ান বিড়ালটি উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে বিড়ালটি সিএফএ, ফিফ, টিআইসি, এফএফি, এসিএফ, সিসিএ, এএফসি দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত। 

Appendix

পার্সিয়ান বিড়ালের একটি মাত্র জাত আছে কিন্তু বছরের পরে বছর প্রজননকারীরা এই প্রজাতির বিভিন্ন বৈচিত্রের পার্সিয়ান বিড়ালের জাত তৈরি করেছে। আর এই বিভিন্ন বৈচিত্রের মধ্যে পার্থক্য গুলো হলো তাদের মুখের উপর ভিত্তি করে। আসল পার্সিয়ান বিড়ালগুলো মুখ গোলাকার আর বৈচিত্রের পার্সিয়ানগুলোদের মুখ চ্যাপ্টা কিছুগুলোর আবার মুখ কুচকানো। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে পার্সিয়ান বিড়ালের সকল খুটিনাটি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

Share with friends and families

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *