গৃহপালিত বিড়ালের জাতগুলোর মধ্যে একটি জনপ্রিয় এবং অন্যতম জাত হলো রাগামাফিন। বিড়ালের এই জাতটিকে একটা সময়ে র্যাগডল বিড়ালের বৈকল্পিক জাত হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ১৯৯৪ সালে এটিকে একটি পৃথক জাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রাগামাফিন বিড়ালগুলো তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং ঘন পশমের জন্য অনেক বেশি জনপ্রিয়। তাই অনেকেই বাসা বাড়িতে রাগামাফিন বিড়ালকে পুষে থাকেন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে রাগামাফিন বিড়াল এবং রাগামাফিন বিড়ালের স্বাস্থ্য খাদ্য চিকিৎসা ও সকল খুটিনাটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
About
রাগামাফিন বিড়ালগুলো তাদের লম্বা, বড় দেহ এবং সুপার প্লাস কোটগুলোর জন্য অনেক বেশি পরিচিত। রাগামফিন বিড়ালগুলো পরিবারের সদস্যদের আলিঙ্গন করতে বেশি পছন্দ করে। রাগামফিন বিড়ালগুলো অত্যন্ত অভিযোজনযোগ্য বিড়াল, তারা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে বৃহত্তর পরিবার, একক পরিবার সকল পরিবেশের সাথেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। এছাড়াও এদের বেশ কিছু পরিচিতি রয়েছে।
- রাগামাফিন জাতের পুরুষ বিড়ালদের ওজন সাধারণত ১২ থেকে ২০ পাউন্ডের হয়ে থাকে এবং মহিলাদের ওজন ৮ থেকে ১৫ পাউন্ডের হয়ে থাকে।
- রাগামাফিনদের দৈর্ঘ্য ৩৩ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- রাগামাফিন বিড়ালদের কোট সিল্কি এবং লম্বা হয়ে থাকে।
- রাগামাফিন বিড়ালদের কোট সাদা, কালো, নীল, লাল, ল্যাভেন্ডার, চেস্টনাট, প্লাটিনাম এবং চকলেট রঙের হয়ে থাকে।
- রাগামাফিন জাতের বিড়ালদের গড়া আয়ু ১৮ বছর অব্দি হয়ে থাকে।
- রাগামাফিন বিড়ালদের চোখগুলো অ্যাম্বার, নীল, সবুজ, সোনালি রঙের হয়ে থাকে।
Health and Treatment
রাগামাফিন একটি সুন্দর এবং স্নেহপ্রিয় জাত। এরা ১৮ বছর পর্যন্ত বেছে থাকে। রাগামাফিন বিড়ালগুলো যেহেতু পরিবারের সদস্যদের কোলে থাকতে অনেক বেশি পছন্দ করে থাকে। তাই এটির স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক বেশি নজর দেওয়া উচিত। রাগামাফিন বিড়ালের জাতগুলোর সাধারনত কম স্বাস্থ্য ঝুকি থাকে।তবে জেনেটিক প্রকরণের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া রাগামাফিম বিড়ালগুলোর বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। রাগামাফিন বিড়ালগুলোর কিডনি রোগ এবং হার্টের সমস্যাগুলো অনেক বেশি হয়ে থাকে। নিন্মে রাগামফিম বিড়ালের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে নিন্মে দেওয়া হলোঃ
- Polycystic Kidney Disease(PKD): PKD হলো একটি বিড়ালের কিডনিতে একাধিক সিস্টের বিকাশজনিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি অবিলম্বে প্রাণঘাতী হওয়ার মতো কোন রোগ নয়। PKD বিড়ালের নতুন সিস্টের বিকাশ রোধ করতে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুকি কমানোর জন্য অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে।
- Hypertrophic Cardiomyopathy (HCM): বিড়ালের একটি সাধারণ রোগ হলো হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। এই রোগে আক্রান্ত হলে হৃদপিন্ডের পেশী ঘন হয়ে যায়। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে।
- Urinary Tract Disease: বিড়ালের মুত্রাশয় এবং মুত্রনালিতে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ডিজিজ নামে পরিচিত এটিকে সাধারণত সিস্টাইটিস হিসেবেও পরিচিত। সিস্টাইটিসে আক্রান্ত বিড়ালগুলো ঘন ঘন এবং বেদনাদায়ক প্রস্রাব করে, প্রায়শই প্রস্রাবে রক্ত বের হও। এই রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
Care
বিড়ালের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই তার নিয়মিত যত্ন নেওয়া উচিত। নিন্মে রাগামফিন বিড়ালের যত্নগুলো দেওয়া হলোঃ
- রাগামাফিন বিড়ালগুলোর অনেক বেশি নরম পশম থাকার পরেও এগুলোর কোটগুলো জট প্রতিরোধী। তাই এই প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও স্টেইনলেস স্টিলের চিরুনি দিয়ে ব্রাশ করাতে হবে। আর এর মাধ্যমে ধবংসাবশেষ এবং মরা চুল অপসারণ করবে এবং বিড়ালের বাহিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
- পিরিওডেন্টাল রোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রতি সুপ্তাহে একবার বিড়ালের দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
- প্রতি সপ্তাহে বিড়ালের নখগুলো কাটতে হবে।
- বিড়ালের চোখের কোনগুলো পরিক্ষা করতে হবে এবং কোন ময়লা বা স্রাব থাকলে তা মুছে ফেলার জন্য একটি স্যাঁতসেঁতে কাপড় ব্যবহার করুন।
- একটি তুলোর বল এবং ৫০/৫০ পানি এবং সাদা ভিনেগার মিশ্রণ দিয়ে কানের মধ্যকার নোংরাগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
- রাগামাফিন বিড়ালদের অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা থাকে তাই তাদের পরিমিত পরিমান খাবার দিতে হবে।
Food and Nutrition
রাগামাফিন বিড়াল বিভিন্ন ধরণের খাবার খেতে পারে। বিড়ালগুলো যেহেতু মাংসাশী তাই তাদের বেচে থাকার জন্য অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বেশি বেশি দিতে হবে। এছাড়াও বিড়লের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শক্তিশালী হওয়ার জন্য অবশ্যই ভেজা এবং শুষ্ক উভয় জাতীয় প্রোটিং পূর্ণ খাবার দিতে হবে। নিন্মে রাগামাফিন বিড়ালের খাদ্য তালিকা দেওয়া হলোঃ
- বিড়ালের প্রোটিনের সরবারহ পূরণের জন্য সাধারণত চিকেন, গরুর মাংস, মাছ এবং মেষশাবকের খাবার খাওয়াতে হবে। আর এই সকল খাবার খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই তাদের বয়স ওজন এবং কার্যকলাপের উপরে ভিত্তি করে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত বেশিরভাগ বিড়ালের প্রতি ওজনের জন্য প্রতি দিনে ২০ থেকে ৩৫ ক্যালরির খাবার প্রয়োজন। তাই বিড়ালের ওজন ১০ পাউন্ডের বেশি হলে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩৫০ ক্যালারি খাবার দিতে হবে।
- বিড়ালের পুষ্টি চাহিদা পুরণের জন্য ছয়টি পুষ্টি প্রয়োজনঃ পানি, শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ। বিড়ালের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই সব পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাবার খাওয়াতে হবে।
- বিড়ালকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। পাইড্রেটেড এবং সুস্থ থাকার জন্য প্রচুর জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া হবে।
- বিড়ালের শক্তির সরবারহ এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। শুকবো খাবারে বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট থাকে।
তবে বিড়ালকে কখনোই কাঁচা মাংস, আঙ্গুর কিসমিস, চকলেট, কফি চা, অ্যালকোহলিক পানীয় জতীয় খাবার খাওয়া উচিত না।
History
রাগডলের মতো রাগামাফিন বিড়ালের ও স্বতন্ত্র জাত হিসেবে একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস র্যেছে। ১৯৬০ এর দশকে অ্যান বেকারের দ্বারা র্যাগডল বিড়ালের স্বতন্ত্র জাত উৎপাদিত হবার পরে একদল প্রজননকারী দল তাদের বিড়ালের কোটের রঙ, নিদর্শন এবং শরীরের আকারের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং একই সাথে তারা জেনেটিকভাবে আরও কিছু বৈচিত্র্য যুক্ত করতে চায়। যেন এই বিড়ালগুলো জেনেটিক স্বাস্থ্যের অবস্থার বিরুদ্ধে কিছু সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
প্রজননকারীগণেরা পার্সিয়ান, হিমালয় এবং গার্হস্থ্য, লম্বা এবং কৈশিক বিড়ালদের সাথে রাগডল বিড়ালকেও অতিক্রম করে এবং তাদের বিড়ালের আকার বাড়াও এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য তৈরি করে এবং এটির নাম দেয় রাগামাফিন। যদিও প্রথমিকভাবে রাগামাফিন নামটি একজন মূল প্রজননকারী রসিকতা করে দিয়েছিলেন তবে এটিই বিড়ালের নাম হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যায়।
বর্তমানে রাগামাফিন বিড়ালের জাতটি একটি সরকারি জাত যেটি ইউনাইটেড ফেনাইন অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান ক্যাট, ফ্যান্সিয়ারস অ্যাসোসিয়েশন এবগ ক্যাট ফ্যান্সিয়ারস ফেডারেশন দ্বারা স্বীকৃত একটি বিড়ালের জাত।
Appendix
রাগামাফিন বিড়ালগুলো যখন জন্মগ্রহণ করে তখন এরা সাদা রঙের হয়ে থাকে এবং পরিপক্ক হবার সাথে সাথে এটি রঙের প্যার্টার্ন তৈরি করে। রাগামাফিম বিড়ালগুলোর পূর্ণ আকার এবং শারীরিক পরিপক্কতা পেতে চার বছরের মতো সময় লেগে থাকে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে রাগামাফিন বিড়াল এবং এদের যত্ন স্বাস্থ্য চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।