মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)। বিড়ালের মূত্রনালী সংক্রমণের লক্ষণ এবং চিকিৎসা।
বিড়ালের একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো মূত্রনালীর সংক্রমণ। বিড়ালদের জন্য মূত্রনালীর সংক্রমণ একটি বিরল রোগ। খুব কম সংখ্যক বিড়ালই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে এটি বিড়ালের জন্য অনেক বেশি বেদনাদায়ক এবং এটি অনেক বেশি প্রভাবিত করে। সাধারণত যেসকল বিড়ালেরা মূত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত তাদের মধ্যেকার প্রায় সবাই পাইপারথাইরয়েডিজম এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মতো রোগে আক্রান্ত। এই রোগের অনেক রকমের লক্ষণ থাকে। আজকের আর্টিকেলের মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনা করা হবে।
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের লক্ষণ
বিড়ালের মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে বেশ কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায়। বিড়ালের অভ্যাসগত এবং শারীরিকভাবে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। নিন্মে বিরালে মূত্রনালীর রোগের লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রাস্রাব করতে অসুবিধা
- লিটার বক্সের বাহিরে প্রস্রাব করা
- অল্প পরিমাণে প্রস্রাব করা
- ঘন ঘন প্রস্রাব, পায়খানা করা
- যৌনাঙ্গ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি চাটা।
- প্রস্রাবের সাথে মাঝেমাঝে রক্ত আসা
- অলসতা এবং নিয়মিত কাজকর্মে আগ্রহ কমে যাওয়া।
- প্রস্রাব করার সময়ে ব্যাথা অনুভব করা।
- প্রস্রাবে অনেক ঝাঝালো অ্যামোনিয়া গন্ধ
- স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পানি পান করা।
- পেট অনেক শক্ত এবং ফুলে যাওয়া
- বমি করা।
এছাড়াও বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের কারনে বিড়ালের ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া এবং মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে।
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের কারণ
বিড়ালের মূত্রনালীতে বিভিন্ন কারনে রোগ হয়ে থাকে। নিন্মে বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের কারণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
ইডিওপ্যাথিক সিস্টাইটিস
বিড়ালের মূত্রনালীতে রোগের জন্য সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ইডিওপ্যাথিক সিস্টাইটিস। এটি সাধারণত অবিরালের মূত্রনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি বিড়ালের প্রস্রাবকে ঘনীভূত করে এবং বিড়ালের ,মানসিক চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বিড়ালের মূত্রাশয়ের আস্তরণের ক্ষতিতে অনেক বেশি অবদান রাখে। পুরুষ মহিলা উভয় বিড়ালেরই ইডিওপ্যাথিক সিস্টাইটিস হতে পারে।
মূত্রাশয়ে পাথর
মূত্রাশয়ে পাথর বিড়ালের একটি কমন সমস্যা। এটি বিড়ালের সিস্টাইটিসের মতো একই রকমের উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং এটিও মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি করে।
শারীরবৃত্তীয় অস্বাভাবিকতা
যদি বিড়ালের কোন দুর্ঘটনার পড়ে থাকে কিংবা জন্মগত সমস্যা থাকে তাহলে বিড়ালের মূত্রাশয়ে কোন সমস্যা হলেই মূত্রনালীতে সমস্যা হতে পারে।
বয়স বা ওজন সংক্রান্ত সমস্যা
সাধারণত বিড়ালের যদি ওজন এবং বয়স বৃদ্ধি পায় তাহলে বিড়ালের নীচের মূত্রনালীতে অনেক রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর বিড়ালের নিচের মূত্রনালীর সংক্রমণই হলো বিড়ালের মূত্রনালীর সংক্রমণ।
এছাড়াও বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের আরো অনেক কারণ রয়েছে। নিন্মে এগুলো দেওয়া হলোঃ
- বিড়ালের মেরুদন্ডের সমস্যা
- প্রস্রাবের থেকে ধ্বংসাবশেষ জমার কারনে ইউরেথ্রালের ব্লকেজ হওয়ায়।
- মূত্রনালীতে টিউমার বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া
- মানসিক বা পরিবেশগত চাপ
এছাড়াও যদি বিড়ালের কিডনিতে সমস্যা থাকে তাহলে বিড়ালের মূত্রনালীর রোগ হতে পারে। বিড়ালের যদি লিটারের বাহিরে প্রস্রাব করার অভ্যাস থাকে তাহলে বিড়ালের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত পুরুষ বিড়ালদের মূত্রনালীতে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে কারন এদের মুত্রনালী অনেক সরু হয়।
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের চিকিৎসা
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের চিকিৎসা করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে থাকে। এই রোগের চিকিৎসায় অনেক বেশি ধৈর্য এবং সময় লাগে সেই সাথে চিকিৎসকের প্রতিনিয়ত সাহায্য এবং চেকাপের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই বিড়ালকে চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। নিন্মে বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
ক্যাথেটার টিউব স্থাপন
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের চিকিৎসার প্রথমেই বিড়ালকে চিকিৎসকের মাধ্যমে বিড়ালের মূত্রনালীর ব্লকেজ অপসারনের জন্য কাজ করে। বিড়ালের মূত্রনালীতে একটি ক্যাথেটার টিউব স্থাপন করতে যেন বিড়াল প্রদাহ ছাড়াই প্রস্রাব করতে পারে এবং বিড়ালের ডায়েট রুটিনে পরিবর্তন আনতে হবে।
ব্যাথা থেকে মুক্তি
বিড়ালের চিকিৎসা শুরুর প্রথমেই বিড়ালের মূত্রনালীর ব্যথা দূর করতে হবে। কারন ব্যথ্যার কারনে বিড়ালের মূত্রনালী আরও সংকুচিত করে এবং বিড়ালের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। তাই ব্যাথা উপশম করেতে হবে।
ঔষধ
বিড়ালের মূত্রনালী শিথিল করার জন্য বিভিন্ন রকমের ঔষধ ব্যাবহার করতে হবে। যেন বিড়ালের মূত্রনালীর অভ্যন্তরীণ বাধা মুক্ত হয় এবং বিড়ালের মূত্রাশয়ের প্রাচীরের আস্তরণের উন্নতি হয়। তবে ঔষধ প্রদানের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরাশমর্শ নিতে হবে।
মানসিক চাপ হ্রাস
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের একটি অন্যতম কারণ হলো বিড়ালের মানসিক চাপ। তাই চিকিৎসার সময়ে অবশ্যই বিড়ালের মানসিক চাপ কমানোর জন্য চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে হবে। বিড়ালের সাথে এমন ভাবে মিশতে হবে যেন বিড়াল কোন উদ্বেগ অনুভব না করে এবং প্রয়োজনে মানসিক চাপ কমাতে বিরালকে সিন্থেটিক ফেরোমন চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
প্রস্রাবের ঘনত্ব হ্রাস
বিড়ালের মূত্রনালীতে রোগের ফলে বিড়ালের মূত্রনালী সংকুচিত হয়ে যায়। তাই বিড়ালের প্রস্রাব ঘন হলে অনেক বেশি ব্যাথা অনুভব হয়। আর তাই বিড়ালের প্রস্রাবের ঘনত্ব কমাতে বিড়ালকে একটি ভালো PH সুষম খাবার দিতে হবে সেই সাথে বিড়ালকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। বিড়ালকে শুকনা খাবারের পরিবর্তে ভেজা খাবার দিতে হবে।
এছাড়াও বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের জন্য বিড়ালকে তরল থেরাপি এবং মূত্রনালীর সার্জারি করাতে হবে। তবে অবশ্যই বিড়ালের যেকোন চিকিৎসা প্রদানের পূর্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের প্রতিরোধ
বিড়ালকে মূত্রনালীর রোগ সহ বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই বেশ কিছু পতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নিন্মে বিড়ালের মূত্রনালীর রোগের প্রতিরোধের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- বিড়ালকে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে। কারণ বিড়ালের সুরক্ষার জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশুদ্ধ পানি অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।
- বিড়ালের মল ত্যাগের পরেই বিড়ালের লিটার পরিষ্কার করতে হবে। বিড়ালের বেশিরভাগ রোগ হয়ে থাকে অপরিষ্কার লিটারের কারনে। তাই বিড়ালের মূত্রনালীর রোগ সহ অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে বিড়ালের লিটার প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করতে হবে।
- বিড়ালকে প্রতিদিন খেলাধুলা করতে হবে সেই সাথে বিড়ালের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকলে বিড়ালের খাবারের রুটিন এবং পরিমাণ পরিবর্তন করতে হবে।
- বিড়ালকে সর্বদাই মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে হবে। বিড়ালের চাপ কমাতে ফেরোমন ডিফিউজার জাতীয় ওয়েল ফেলিওয়ে এবং এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজার পেট রেমিডি স্ট্রসড ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়া বিড়ালকে প্রতি মাসে সম্ভব না হলেও প্রতি ছয় মাস পরে পরে চেকাপের জন্য পশু চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে।
পরিশিষ্ট
মূত্রনালীর সংক্রামণ প্রতি বছর প্রায় ১-৩% বিড়ালকে প্রভাবিত করে। এটি পুরুষ এবং মহিলা উভয় বিড়ালের মধ্যেই হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং বিড়ালকে অধিকতর পানি প্রদান এবং সঠিক খাবার প্রদানের মাধ্যমে বিড়ালকে এই রোগের থাকে মুক্তি দেওয়া যায়। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়ালের মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং বিড়ালের মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছে। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেটা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।