বিড়াল কেন হলুদ তরল বমি করে

বিড়ালের হলুদ তরল বমি বদ হজম থেকে শুরু করে কিডনি রোগ পর্যন্ত অসংখ্য রোগের ইঙ্গিত হতে। এছাড়াও এটির অর্থ হতে পারে বিড়ালকে কম পরিমাণ খাবার খাওয়াতে হবে। হলুদ রঙের তরল বমি সাধারণত পিত্ত এবং পাকস্থলীর অ্যাসিডের সংমিশ্রণ। যখন কোন বিড়াল খালি পেটে থাকে তখন হজমের অ্যাসিডগুলোকে পাতলা করার মতো কিছুই থাকে এবং এটি পেটের আস্তরনকে জ্বালাতন করানো শুরু করে যার ফলে বিড়াল পিত্ত বমি করে। এছাড়াও বিড়ালের পিত্ত বমি করার আরো অনেক কারণ রয়েছে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়াল কেন হলুদ তরল বমি করে এই বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

বিড়ালের হলুদ তরল বমির কারণ

হলুদ বমি সাধারণত পাকস্থলীর অ্যাসিড এবং পিত্ত দ্বারা গঠিত। পেটের অ্যাসিড হজমে সহায়তা করার জন্য পাকস্থলীড় আস্তরণে উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন কারণে বিড়াল হলুদ তরল বমি করে থাকে। নিন্মে বিড়ালের হলুদ তরল বমির কারণ গুলো উল্লেখ করা হলোঃ 

প্যানক্রিয়াটাইটিস

অগ্ন্যাশয় একটি বিড়ালকে সারাজীবন সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমত এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে কাজ করে । এছাড়াও এটি অন্ত্রের ট্যাক্টকে সমস্ত ভিটামিন, খনিজ এবং চর্বি হজম করতে সহায়তা করে।অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহকে প্যানক্রিয়াটাইটিস হিসাবে উল্লেখ করা হয়, এবং এটি চেক না করা থাকলে বিড়ালের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত বিড়াল হলুদ তরল বমি করতে পারে। এছাড়াও রোগের আরও অনেক লক্ষণ রয়েছে। এগুলা হলো ঃ 

• অলসতা
• ডায়রিয়া
• ক্ষুধা কমে যাওয়া 

প্যানক্রিয়াটাইটিস নির্নয় করা আগে কঠিন হলেও বর্তমানে বিড়ালের রক্ত পরীক্ষা এবং পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।  

গ্যাস্ট্রাইটিস

পাকস্থলীর আস্তরণে প্রদাহ হলে গ্যাস্ট্রাইটিস হয়। বিড়ালদের মধ্যে গ্যাস্ট্রাইটিসের তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী উভয় রকমের সমস্যাই হতে পারে। যখন একটি বিড়াল গ্যাস্ট্রাইটিস বিকাশ করে ,তখন তার সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে থাকে ক্ষুধা হ্রাস এবং বমি হওয়া। গ্যাস্ট্রাইটিস এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলা হলোঃ 

• প্যানক্রিয়াটাইটিস
• ভাইরাস/ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
• অ্যান্টিবায়োটিক
• ডায়াবেটিক ketoacidosis
• পচা খাবার
• টক্সিন এক্সপোজার
• মানসিক চাপ

তীব্র গ্যাস্ট্রাইটিস সাধারণত ২৪ ঘন্টার কম স্থায়ী হয়। তবে দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রাইটিস সমাধান হতে অনেক বেশি সময় লাগে। 

ডায়াবেটিস

মানুষের মতো বিড়ালের ও একটি  সাধারণ রোগ হলো ডায়াবেটিস মেলিটাস। বিড়ালের ডায়াবেটিস হওয়ার সাথে সাথে, হলুদ তরল বমি আকারে ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে। বিশেষত যদি তারা খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে বমি করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে বিড়ালের ডায়াবেটিস হয়েছে। বিড়ালের ডায়াবেটিস থাকলে আরো বেশ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ 

• অত্যধিক তৃষ্ণা
• প্রস্রাব বৃদ্ধি
• ওজন কমে যাওয়া
• বিষণ্ণতা

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বিড়ালকে চিকিৎসা না করা হলে কোমায় যেতে পারে বা এমনকি কোন গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

কিডনি রোগ

বিড়ালের হলুদ তরল বমি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো কিডনির রোগ। যখন কিনডি সহটিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে তখন বিড়ালের রক্তপ্রবাহে টক্সিন জমা হয়, যার ফলে অক্ষমতা, বমি বমি ভাব এবং বমি হয়। এছাড়াও কিডনি রোগের আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। এগুলো হলোঃ 

• ওজমে কমে যাওয়া
• প্রথমে প্রস্রাব বৃদ্ধি তারপরে প্রস্রাব হ্রাস
• অতিরিক্ত পানি পান করা 
• কোটের গুনগত মান হ্রাস পাওয়া

বেশিরভাগ বিড়ালের ক্ষেত্রে সাধারণত ৭০% কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে কিডনি রোগের লক্ষণ গুলা দেখা যায়। 

বিড়াল হলুদ তরল বমি করলে করণীয় 

সাধারণত যদি বিড়াল সুস্থ অবস্থায় হলুদ তরল বমি করে তাহলে এটা নিয়ে উদ্বেগের তেমন কোন কারণ নেই। সুস্থ অবস্থায় যদি বিড়াল তরল বমি করার পরে স্বাভাবিক আচারণ করে তাহলে তাহলে প্রাথমিক ভাবে বিড়ালকে দুই এক দিনের জন্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর যদি বিড়াল হলুদ তরল বমি করার পরে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং অলস হয়ে যায় বা বমি করতে থাকে তাহলে বিড়ালকে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক বিড়ালের খাবারের সময়সূচির পরিবর্তন, শুষ্ক খাবার খাওয়ানো বা পরীক্ষা করার মাধ্যমে বিড়ালের হলুদ তরল বমির চিকিৎসা প্রদান করবেন। যদি ঘন ঘন বমি হয় এবং বিড়ালের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাহলে বিড়ালকে পশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

বিড়ালের হলুদ তরল বমির জন্য চিকিৎসা

বিড়ালের হলুদ তরল বমির জন্য যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তাহলে বিড়ালকে পশুচিকিতসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়ালকে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে। বিড়ালকে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন, রক্তের ইলেক্ট্রোলাইট পরীক্ষা, রক্তের কনিকা পরীক্ষা, রক্তের রাসায়নিক পরীক্ষা করাতে হবে। এছাড়াও বিড়ালের থাইরয়েড পরীক্ষা, ইউরিনালাইসিস পরীক্ষা, এক্স-রে পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ডের মতো পরীক্ষা করাতে হবে। সকল পরীক্ষার ফলাফলের উপরে নির্ভর করে প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা করতে  হবে। 

বিড়ালদের বমির জন্য কার্যকারী পশুচিকিতসার মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব রোধকারী ঔষধ, হাইড্রেশন পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন শুষ্ক খাদ্য। বিড়ালের শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে বিড়ালকে কিছু বহিরাগত চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। এবং কিছু ঔষধ দিয়ে বিড়ালকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। যদি বিড়ালের ২৪ ঘন্টার মধ্যে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে বিড়ালকে পশুহাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। 

সাধারনত অল্প সময়ের মধ্যেই বিড়াল হলুদ তরল বমি থেকে সুস্থতা লাভ করে তবে কিছু কিছু বিড়ালের ক্ষেত্রে অনেক সময় ও লাগতে পারে। আর এই সুস্থতা বিড়ালের বমির অন্তনির্হিত কারণের পাশাপাশি বেশ কিছু সামগ্রিক অবস্থার উপরেও নির্ভর করে। তাই বিড়ালের হলুদ তরল বমি হলে অবশ্যই বিড়ালকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।  

বিড়ালের হলুদ তরল বমির প্রতিরোধ 

বিড়ালের হলুদ তরল বমির অনেক কারণ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে বিড়াল কোন কারণ ছাড়াই হলুদ তরল বমি নিক্ষেপ করে। তবে বিড়ালের অনাকাঙ্খিত হলুদ তরল বমির প্রাভাব এড়াতে বেশ কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। নিন্মে বিড়ালের হলুদ তরল প্রতিরোধের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ 

• বিড়ালকে হলুদ তরল বমি থেকে রক্ষা করতে প্রতি বছর অন্তত একবার নিয়মিত সুস্থতা চেকাপের জন্য পশু চিকিৎসকের নিকটে নিয়ে যেতে হবে। 
• বিড়ালকে AAFCO দ্বারা স্বীকৃত উচ্চমানের মাংস ভিত্তিক ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। 
• বিড়ালের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাহিরের প্রাণীদের থেকে সংক্রমিত রোগ হতে রক্ষা করতে বাড়ির মধ্যেই রাখতে হবে। 
• গাছপালা, মানুষের খাবার, রাসায়নিক দ্রব্য এবং অন্যান্য টক্সিন জাতীয় খাবার থেকে বিড়ালকে দূরে রাখতে হবে। 

এছাড়াও বিড়ালকে পরিমিত খাবার দিতে হবে এবং রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।  

পরিশিষ্ট  

সাধারণত বিড়াল যখন হলুদ তরল বমি করে, তখন অধিকাংশ সময়েই বিড়ালের পেট খালি থাকে। অ্যাসিড পেটের আস্তরণে জ্বালাতন করে এবং এর ফলে বিড়াল বমি করে। এছাড়াও অনেক রোগ আছে যেগুলোর কারণে বিড়াল বমি করে। অনেক ক্ষেত্রে বিড়াল অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করে যদি সেটা হজম করতে না পারে তখন বমি করে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিড়াল কেন হলুদ বমি করে এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।